শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব: উচ্চশিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নব দিগন্ত

| বুধবার , ২৮ মে, ২০২৫ at ৩:২৮ অপরাহ্ণ

বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ধারা বদলে দিচ্ছে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র। সেই পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবশালী উপাদান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (AI)। একসময় যেটি ছিল গবেষণাগারের বিষয়, আজ তা উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। শিক্ষকতা থেকে গবেষণা, প্রশাসন থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সহায়তা—সর্বত্রই এআই-এর ব্যবহার বাড়ছে।

এআই-এর প্রভাবশালী ব্যবহার

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদান পদ্ধতিতে এআই নিয়ে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। যেমন—

১।ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষা: এআই প্রযুক্তি শিক্ষার্থীর আগ্রহ, দুর্বলতা ও শেখার গতি বিশ্লেষণ করে কাস্টমাইজড কনটেন্ট সরবরাহ করতে পারছে।

২।ভার্চুয়াল টিউটর: ChatGPT বা Google Bard-এর মতো ভাষাভিত্তিক এআই সিস্টেম শিক্ষার্থীদের ২৪/৭ সহায়তা দিচ্ছে, ঘরে বসেই জটিল বিষয় সহজে বুঝে নিতে পারছে তারা।

৩।গবেষণায় সহায়তা: গবেষকদের তথ্য বিশ্লেষণ, রেফারেন্স খোঁজা ও প্রাথমিক রিপোর্ট তৈরিতে এআই দ্রুততা ও নির্ভুলতা এনে দিয়েছে।

৪।প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বয়ংক্রিয়তা: ভর্তি প্রক্রিয়া, ফলাফল বিশ্লেষণ ও শিক্ষার্থীদের রেকর্ড ব্যবস্থাপনায় এআই ব্যবস্থাগুলো সময় ও খরচ সাশ্রয় করছে।

শিক্ষার্থীদের অভিমত

এআই-এর ব্যবহার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের তাদের  নিজস্ব  দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো:

কম্পিউটার সায়েন্স, চট্রগ্রাম  বিশ্ববিদ্যালয়:

“আমরা প্রতিদিনই এআই ব্যবহার করছি—প্রজেক্টে, অ্যাসাইনমেন্টে কিংবা কনসেপ্ট বুঝতে। ChatGPT আমাকে জাভার কঠিন থিওরি গুলো সহজে বুঝিয়ে দেয়। এতে অনেক সময় বাঁচে।”

 ইংরেজি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:

“আমি কবিতা বা সাহিত্য বিশ্লেষণের সময় এআই-এর সাহায্য নিই। তবে আমি চেষ্টা করি নিজের চিন্তা আগে লিখে তারপর মিলিয়ে দেখি। এটা যেন টুল হয়, পুরো ভরসা না।”

 ব্যবসায় প্রশাসন, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:

“এআই দিয়ে রিপোর্ট লেখা বা মার্কেট অ্যানালাইসিস অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু কেউ কেউ সব কাজ এআই-এর উপর ছেড়ে দিচ্ছে, এটা চিন্তার বিষয়।”

বাংলা বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়:

“আমার মতে, এআই কে ভয় না পেয়ে সেটাকে কাজে লাগাতে হবে। তবে শিক্ষকরা যদি গাইডলাইন না দেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা হয়তো বিভ্রান্ত হতে পারে।”

চ্যালেঞ্জ ও ভাবনা

তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে—

শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কি তাদের চিন্তার স্বাধীনতা কমিয়ে দিচ্ছে?

মূল্যায়নের ক্ষেত্রে চিটিং প্রতিরোধ করা কীভাবে সম্ভব, যদি এআই দিয়ে উত্তর তৈরি করা যায়?

শিক্ষক ও কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তা নিয়েও তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

উচ্চশিক্ষায় এআই ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজন একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণে সহায়তা করলেও, নৈতিকতা, চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা গঠনের দিকেও নজর দিতে হবে। পাশাপাশি, এআই ব্যবহারের নীতিমালা তৈরি করে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা জরুরি।

পরিশেষে এটাই বলা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উচ্চশিক্ষাকে করছে আরও গতিশীল, ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও প্রযুক্তিনির্ভর। তবে প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজন মানবিক বোধ ও নৈতিকতার সমন্বয়। তবেই আমরা গড়ে তুলতে পারব ভবিষ্যতের একটি আরও সমৃদ্ধ, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ।

প্রতিবেদক: ফাতেহা রহমান, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১ লক্ষ ইয়াবাসহ ওয়ার্ড যুবদলের আহবায়ক গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলীতে চোরাই তেলের ব্যবসা নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আটক ৪