বাঙালি হিন্দু সমপ্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা আজ শুরু হচ্ছে। আজ মহাষষ্ঠী। এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হলো বোধন। শাস্ত্রকারদের মতে, বোধন হল ‘জাগরণ’, ঘুম থেকে জাগানো। উপলব্ধি করা যে দেবী এসেছেন। আর আজ ষষ্ঠী তিথিতে হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে ‘কন্যারূপে’ মর্ত্যলোকে বাবার বাড়ি আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।
এ বছর দেবী আসছেন গজে (হাতি)। দেবী গমন করবেন দোলায়। শাস্ত্রমতে, গজে আগমন শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য–শ্যামলার প্রতীক। তবে দোলায় প্রস্থানকে অশুভ ধরা হয়, যা মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে। এ বছর সারাদেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১ হাজার ৮৯৪টি বেশি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে তিনি বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার যে অগ্রযাত্রা আমরা শুরু করেছি, তার সফল বাস্তবায়নে ধর্ম–বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সকল অশুভ, অন্যায় আর অন্ধকারকে পরাজিত করে শুভ চেতনার জয় হবে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে কল্যাণ ও সমৃদ্ধির পথে। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সকল ধর্ম–সমপ্রদায়ের মানুষের অপূর্ব মেলবন্ধনের অনন্য নিদর্শন বাংলাদেশ। জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের সকলের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির এই ধারাকে সমুন্নত রেখে এবারের দূর্গাপূজাও সারাদেশে নির্বিঘ্নে এবং যথাযথ উৎসাহ–উদ্দীপনা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা আশা করেন।
এবার চট্টগ্রামে নগর ও জেলায় মোট ১ হাজার ৯০৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলায় এবার সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরে একটি কমে ২৯২টি সর্বজনীন পূজার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।