শান্তিপূর্ণ ভোটে বিচ্ছিন্ন সহিংসতা

পটিয়ায় ব্যালট ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র স্থগিত আনোয়ারায় দিনভর উত্তেজনা, আহত ২ চন্দনাইশে ৪ বহিরাগতকে গণপিটুনি বোয়ালখালীতে চাকুসহ যুবক আটক

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ৩০ মে, ২০২৪ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের চার উপজেলায় গতকাল বিচ্ছিন্ন কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনোয়ারার বরুমচড়ার একটি কেন্দ্রে সহিংসতায় দুইজন আহত হয়। কিছু কেন্দ্রে দিনভর উত্তেজনা, ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পটিয়ায় কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভোট স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভোট কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করেন এবং ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. শহীদুল্লাহ রায়হানকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। এছাড়া নির্বাচন চলাকালীন আনারস প্রতীকের দুই সমর্থককে কোপানোর ঘটনা ঘটে।

চন্দনাইশে সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বেপারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে চারজন বহিরাগতকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে বিজিবির হাতে তুলে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ওই কেন্দ্রের বাইরে মাঝেমধ্যে পটকাবাজির আওয়াজ শোনা যায়। এছাড়া সকাল ৯টায় দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী রজবিয়া আজিজিয়া রাহমানিয়া সুন্নিয়া মাদরাসা কেন্দ্র দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হালকা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় একজন আহত হয়। বোয়ালখালীতে সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সামনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল আলমের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সাথে সংঘর্ষ হয়। পরে সকালে চাকুসহ রেজাউল করিম সাইফু (৩২) নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ।

আনোয়ারা প্রতিনিধি জানান, আনোয়ারায় এবার উপজেলা নির্বাচনে রেকর্ড উপস্থিতিতে ভোট উৎসব হয়েছে। বরুমচড়ার একটি কেন্দ্রে সহিংসতায় দুইজন আহত হওয়া বাদে ভোট ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে দিনভর উত্তেজনা, ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উপজেলায় ১৬ বছরের পর এবারের ভোটে সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন চলাকালে বিচ্ছিন্ন ঘটনায় ৪ কেন্দ্রে সাময়িক ভোট বন্ধ ছিল।

নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আনোয়ারায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ জন। তারমধ্যে ২০০৮ সালের পর এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৪২ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানা গেছে। উপজেলার ৭৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪টি কেন্দ্রে সাময়িক ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকলেও দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিছু কেন্দ্রে ধাওয়া পাল্টা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আনোয়ারায় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টা পর্যন্ত সব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও ১১টার পর হাইলধর বশিরুজ্জামান স্মৃতি শিক্ষা কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের সমর্থকদের উপর হামলা চালায় দোয়াতকলম প্রতীকের সমর্থকেরা। যার ফলে একঘণ্টা ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকে কেন্দ্রটিতে। এরপর পশ্চিম বরুমছড়া আখতারুজ্জমান উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে আনারস প্রতীকের সমর্থকরা দোয়াত কলম প্রতীকের দুই সমর্থক মোহাম্মদ মামুন ও মির্জা জাহিদ হাসান আহত হয়। এরপর দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে এ কেন্দ্রেও ৪৫ মিনিট ভোট বন্ধ থাকে। পরে স্বাভাবিক ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া পূর্ব গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দোয়াতকলমের সমর্থকেরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুই পক্ষকে ধাওয়া করে। এই সময় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে।

এরপর বেলা ১২টায় বারশত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুপুর দেড়টায় বরুমছড়া ছমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে বিজিবি এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া ইছাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিলাইগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুইপক্ষ কেন্দ্র দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেই সাথে তেকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে একপক্ষ।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানায়, আনোয়ারায় নির্বাচনে গোলযোগের কারণে ৪টি কেন্দ্রে সাময়িক ভোট স্থগিত করা হয়। কেন্দ্রগুলো হলো হাইলধর বশিরুজ্জাম স্মৃতি শিক্ষা কেন্দ্র, পশ্চিম বরুমছড়া আখতারুজ্জমান উচ্চ বিদ্যালয়, পূর্ব গহিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেকোটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আবু জাফর ছালেহ জানান, বিচ্ছিন্ন দুই একটি ঘটনা ছাড়া এবারের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। ৪টি কেন্দ্রে সাময়িক ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকলেও ৭৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করেছে।

পটিয়া প্রতিনিধি জানান, পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে। সকাল থেকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে নারীপুরুষ ভোটারদের লাইন ধরে ভোট দিতে দেখা যায়। একটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা, দুয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা এবং উপজেলার শোভনদন্ডী, খরনা, হাইদগাঁও, কোলাগাঁও, কুসুমপুরা, জঙ্গলখাইন, কাশিয়াইশ, আশিয়া ইউপির প্রায় ৪০টি কেন্দ্র দখল করে দোয়াতকলম প্রতীকের কর্মী সমর্থকরা জাল ভোট নেয়ার অভিযোগ করেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ।

উপজেলার কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক ভোট কেন্দ্রে দোয়াতকলম প্রতীকের সমর্থকদের ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনায় ভোট স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। পরে দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বশর মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভোট কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেন এবং ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. শহীদুল্লাহ রায়হানকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

এসময় পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলাউদ্দীন ভূঁইয়া জনী ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার আরিফুল ইসলামসহ বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ভোট চলাকালীন সকাল ১০টায় কাশিয়াইশ ইউনিয়নের পূর্ব পিঙ্গলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

প্রিজাইডিং অফিসার জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম এর নেতৃত্বে দুইআড়াইশ দোয়াতকলমের সমর্থক এসে হামলা চালিয়ে ৯টি ব্যালট পেপারের বই নিয়ে যায়। ৯টি ব্যালট পেপারে ৫৫২টি অব্যবহৃত পাতা ছিল বলেও তিনি জানান। পরে ম্যাজিস্ট্রেট এসে কেন্দ্রটির ভোট স্থগিত করে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পটিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম।

অপরদিকে নির্বাচন চলাকালীন আনারস প্রতীকের দুই সমর্থককে কোপানোর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলার পশ্চিম হাইদগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এসময় আনারস প্রতীকের কর্মী ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত মোহাম্মদ ফয়সাল (৪৩) ও আরেক সমর্থক মো. ওয়াসিমকে (৩৬) কুপিয়ে জখম করা হয়।

আহত উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, দোয়াতকলম প্রতীকের কর্মী ও হাইদগাঁও ইউপির বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান বিএম জসিম এর নেতৃত্বে সাকিবসহ ১০১২ জন দোয়াতকলম সমর্থকরা রাম দা ও কিরিচ দিয়ে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে।

আহত আহত ফয়সাল জানান, আমি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ প্রতীক আনারস মার্কার পক্ষে কাজ করায় তারা আমাকে কুপিয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে পটিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

চন্দনাইশ প্রতিনিধি জানান, চন্দনাইশে সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কিছু বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া বিকেল ৪টা পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই চলেছে ভোট। উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে মোট ৬৮ টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।

বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বেপারি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে থেকে ৪ জন বহিরাগতকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে বিজিবির হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা। ওই কেন্দ্রের বাইরে মাঝেমধ্যে পটকাবাজির আওয়াজ শোনা যায়। ভোটারদের মধ্যে ভয় ধরানোর জন্য এসব পটকাবাজি ফুটানো হচ্ছে বলে ধারণা স্থানীয় জনতার। সকাল ৯টায় দোহাজারী পৌরসভার জামিজুরী রজবিয়া আজিজিয়া রাহমানি সুন্নিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে দুই প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের আবু আহমদ চৌধুরী জুনু ও মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দীন আহমদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় একজন আহত হয় বলে জানান স্থানীয়রা। তবে এ ঘটনা কেন্দ্রের বাইরে হওয়ায় ভোটগ্রহণে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি বলে জানান ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার প্রফেসর মো. নুর হোসাইন।

সাতবাড়িয়ার হাছনদন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিশৃংখলা সৃষ্টির অভিযোগে দোহাজারী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পহর উদ্দীনকে আটক করে আইন শৃংখলা বাহিনী। তবে ভোটগ্রহণ শেষে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

উপজেলার বৈলতলী ইউনিয়নের ৭টি কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মিনহাজুর রহমান জানান, ৭টি কেন্দ্রের প্রতিটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। কোথাও বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখিনি। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে।

ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ চৌধুরী জুনু অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে একচেটিয়াভাবে মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দীনের পক্ষে কাজ করছেন। প্রশাসনের লোকজন আমার সমর্থকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। এছাড়া সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আমার এজেন্টদের বের করে দিয়েছে জসিমের লোকজন।

মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী জসিম উদ্দীন আহমদ জানান, কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকদিন পর চন্দনাইশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছে।

চন্দনাইশ থানার ওসি (তদন্ত) যুযুৎসু যশ চাকমা বলেন, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টাকালে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ তিনজনকে আটক করেন।

বোয়ালখালী প্রতিনিধি জানান, বোয়ালখালীতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে উপজেলা নির্বাচন। সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে চরণদ্বীপ ইউনিয়নের চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের সামনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল আলমের সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সংঘর্ষ হয়। পরে সকালে চাকুসহ রেজাউল করিম সাইফু (৩২) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত ফাতেমা চৌধুরী বলেন, পুলিশ চাকুসহ রেজাউল করিম সাইফু নামের এক যুবককে আটক করেছে। আটককৃতকে নিয়মিত মামলা দেয়ার জন্য অফিসার ইনচার্জ বরাবর সোপর্দ করা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলার শ্রীপুরখরণদ্বীপ ইউনিয়নের অধিকাংশ কেন্দ্রে কয়েকজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্ট ছিল না বলে জানা গেছে। গতকাল বুধবার শ্রীপুরখরণদ্বীপের অধিকাংশ কেন্দ্রে দোয়াত কলম প্রতীকে রেজাউল করিমের এজেন্ট ছাড়া আর কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দেখা যায়নি। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর মসজিদ বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীপুর দরবার দিঘীর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্রে আনারস প্রতীক ও কাপ পিরিচ প্রতীকের এজেন্ট থাকলেও হেলিকপ্টার, মোটর সাইকেল ও টেলিফোন প্রতীকের কোনো এজেন্ট কেন্দ্রে ছিল না।

শ্রীপুর মসজিদ বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নাহিদুজ্জামান বলেন, দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্ট আমার সাথে যোগাযোগ করেনি।

শ্রীপুর দরবার দিঘীর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, আমার কাছে হেলিকপ্টার প্রতীকের এজেন্ট দেখা করেনি। করলে বসতে পারতো।

নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ার দাবিতে বিকেলে উপজেলা সদরে রেজাউল করিমের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় তিনি তার প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জাহেদুল হকের (হেলিকপ্টার প্রতীক) বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ, নির্বাচনী ফরমে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন, কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ভোটার প্রভাবিত করাসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। রেজাউল করিম রাজা এসময় বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বোয়ালখালী থানার ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, দোয়াত কলম প্রতীকে রেজাউল করিম রাঙ্গুনিয়া থেকে বহিরাগত লোক এনে কেন্দ্র দখল করার পায়তারা করেছিল। মূলত তিনি সেটা করতে না পেরে প্রশাসনের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প 
পরবর্তী নিবন্ধমোজাম্মেল, জাহেদুল হক দিদার ও জসীম জয়ী