টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এমন দিন খুব কমই কাটিয়েছে। নানা শংকা নিয়ে গতকাল শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। শুরুতেই সেই চির চেনা বাংলাদেশ। দলের খাতায় ৮ রান যোগ হতেই তারুণ্যের প্রতিনিধি সাইফ নেই। শংকাটা যেন আরো বড় হচ্ছিল। তবে এবার সে শংকাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন তামিম ইকবাল এবং নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুর ধাক্কা সামলে তামিম যতটা আগ্রাসী শান্ত ততটাই যেন দীঘির জলের মত শান্ত। সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে তামিম ফিরে গেলেও শান্তর ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি এবং মোমিনুলের অধিনায়কোচিত ইনিংস দিন শেষে যেন অন্য এক বাংলাদেশ। দুই ওপেনারকে হারালেও বাংলাদেশ প্রথম দিন শেষে তুলে নিয়েছে ৩০২ রান। ১২৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে অপরাজিত রয়েছেন শান্ত।
টস জিতে আগে ব্যাট করার সাহসী সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ। কিন্তু সিদ্ধান্তটা ভুল প্রমাণ হতে বসেছিল ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। রানের খাতা খোলার আগে যখন ফিরেন সাইফ হাসান। তবে সে ধাক্কাকে মোটেও ধাক্কা মনে করলেন না তামিম এবং শান্ত। তবে তামিম যথারীতি মারকুটে মেজাজে। অপরদিকে শান্ত যেন চরম শান্ত মেজাজে। তামিমের রান যখন ২৪ পেরিয়ে গেছে তখনো রানের খাতা খুলেননি শান্ত। কিন্তু সময় যতই গড়িয়েছে ততই যেন পরিণত হয়েছে শান্ত। শ্রীলংকার বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজকে বলা হচ্ছে অনেক চ্যালেঞ্জের। আর সে চ্যালেঞ্জ জয়ের প্রথম নায়ক যেন তামিম। ম্যাচের প্রথম ওভার থেকেই ছড়িয়ে দিতে থাকেন চ্যালেঞ্জ জয়ের ঘোষণা। যদিও দ্বিতীয় ওভারে সাইফ হাসানকে হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তামিম সেই চাপকে উড়িয়ে দেন তুড়ি বাজিয়ে। উইকেটের চারপাশে কেবলই চারের ছড়াছড়ি তামিমের। একপাশে এমন সঙ্গী থাকলে অপর পাশে শান্ত কি আর শান্ত থাকতে পারে। তাইতো তিনিও হাত খোলা শুরু করলেন। যদিও একেবারে টেস্ট মেজাজে ব্যাট করেছেন বাংলাদেশের আগামীর এই তারকা।
তামিম এবং শান্ত মিলে দলকে দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। স্বাগতিক কোন বোলারই পরীক্ষায় ফেলতে পারছিলনা এই দুজনকে। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে তামিম ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। অপরদিকে শান্ত তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু এবার হতাশ করলেন তামিম। প্রায় দুই বছর পর টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগটা একেবারে কিনারায় গিয়ে ফেলে এলেন। সে সাথে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার সুযোগটাও হাতছাড়া করলেন তামিম। মাত্র ৫৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া থেকে বুঝা যায় কতটা আগ্রাসী ছিলেন তামিম। তামিমের সেঞ্চুরি যখন মনে হচ্ছিল কেবলই সময়ের ব্যাপার তখনই হারিয়ে ফেলেন মনোযোগ। ফার্নান্দোর অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ক্যাচ অনুশীলন করিয়ে বল জমা দিলেন স্লিপে। থামে ৯০ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি। ১০১ বলের ইনিংসটিতে তামিম মেরেছেন ১৫টি দৃষ্টি নন্দন চার। আর সে সাথে ভাঙ্গে শান্তর সঙ্গে ১৪৪ রানের জুটি।
এরপর কেবলই বাংলাদেশের দাপট। বলতে গেলে শান্ত এবং মোমিনুলের দাপট। দিনের বাকি সময়টা কেবলই বল কুড়াতে ব্যস্ত ছিল লংকান ফিল্ডাররা। প্রায় ৫১.৩ ওভার অবিচ্ছিন্ন ছিলেন শান্ত এবং মোমিনুল। এরই মধ্যে শান্ত তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আগের ৬ টেস্টে মাত্র একটি হাফ সেঞ্চুরি ছিল শান্তর। বার বার প্রশ্ন উঠছিল শন্তর দলে থাকা নিয়ে। আর সে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন শান্ত দারুণ এই সেঞ্চুরি দিয়ে। বলতে গেলে পুরো দিন ব্যাট করেছেন শান্ত। শুরু থেকেই যেমন ছিলেন দীঘির জলের মত শান্ত তেমনি সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও তাড়াহুড়ো করেননি। নব্বই থেকে শতরানে যেতে বল খেলেছেন ৩৮টি। ধনাঞ্জয়ার বলে দৃষ্টিনন্দন এক কাভার ড্রাইভে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান শান্ত। ক্যারিয়ারের প্রথম শতরান স্পর্শ করতে বল খেলেন ২৩৫ টি।
তামিমের বিদায়ের পর শান্তর সাথে জুটি গড়ে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক। দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৬৪ রানে। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছেন টাইগার দলপতি। শান্ত এবং মোমিনুল মিলে যোগ করেছেন ১৫০ রান। যা প্রথম দিন শেষে টাইগারদের পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।