নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের সবকিছুই যেন বাংলাদেশের অনুকূলেই যাচ্ছে। বলা যায় টেস্টের প্রথম দিন থেকেই সবকিছু যেন পরিকল্পনা মতই এগুচ্ছে। প্রথম দিনে তিনশর বেশি রান, দ্বিতীয় দিনে প্রতিপক্ষের ৮টি উইকেট তুলে নেওয়া আর তৃতীয় দিনে আবারো দুর্দান্ত ব্যাটিং সব মিলিয়ে সিলেট টেস্ট যেন বাংলাদেশের দিকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই টেস্ট থেকে ভালো কিছুর আশা করতে পারে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সব ব্যাটারই কিছু না কিছু অবদান রেখেছিল দলের ইনিংসে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত খেলছে দলের মিডল অর্ডার। যদিও এই ইনিংসে বাংলাদেশ খানিকটা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে। কারণ দলের দুই গুরুত্বপূর্ন ব্যাটার জয় এবং মোমিনুল রান আউটের শিকার হয়ে ফিরেছেন। তবে ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন অধিনায়ক নাহমুল হোসেন শান্ত। বলা যায় দলকে যেন সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক। আর এই নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। দারুন এক সেঞ্চুরি করে দলের স্কোরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বড় সংগ্রহের পথে। আর দলের সবচাইতে সিনিয়র পার্টনার মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে পাচ্ছেন দারুন সহযোগিতা। আর তাতেই যেন স্বপ্ন বড় হচ্ছে বাংলাদেশের। ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে করেছে ৩ উইকেটে ২১২ রান। ফলে স্বাগতিকরা এগিয়ে ২০৫ রানে। এর আগে নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩১৭ রান। ফলে তারা লিড পেয়েছিল ৭ রানের। সে লিড পেছনে ফেলে বাংলাদেশ দল এখন এগিয়ে ২০৫ রানে। আজ অন্তত দুই সেশন ব্যাট করতে পারলে এই ম্যাচে জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারে বাংলাদেশ। ম্যাচের পঞ্চম বা শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের সামনে বড় একটা টার্গেট দাঁড় করানোই এখন লক্ষ্য বাংলাদেশের। আর সে জন্য আজ অন্তত দুই সেশন ব্যাট করতে হবে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি এগিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করলেন শান্ত। যা বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম এবং একমাত্র।
নিউজিল্যান্ডকে ৩১৭ রানে অল আউট করে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা সুখকর হয়নি। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফেরার পরপরই ফিরেন দুই ওপেনার জাকির হাসান এবং মাহমুদুল হাসান জয়। ৩০ বলে ১৭ রান করে এজাজ প্যাটেলের বলে এলবিডব্লিউ হন জাকির। প্রথম ইনিংসেও এই এজাজের শিকার হয়েছিলেন তিনি। তবে জয় ফিরেছেন দুর্ভাগ্যজনক এক রান আউট হয়ে। ৪৬ বলে ৮ রান করে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হন তিনি। ক্রিজ ছেড়ে একটু সামনে এগিয়ে এসেছিলেন জয়। কিন্তু শান্তর স্ট্রেইট খেলা বলটিতে হাত ছুয়ে দেন সাউদি। বল স্টাম্প ভাঙলে আউট হয়ে ফিরতে হয় মাহমুদুল হাসান জয়কে। এরপর শান্তর সাথে জুটি বাধেন মোমিনুল। বেশ বালই এগুচ্ছিলেন দুজন। এরই মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত ৯৫ বলে। হাফ সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছিলেন মোমিনুলও। কিন্তু তখনই ভুল বোঝাবুঝি। মোমিনুলের কলে সাড়া দিতে গিয়ে আবার ব্যাক করলেন শান্ত। ততক্ষণে অনকে দূর চলে এসেছেন মোমিনুল। আর ফিরতে পারেননি। রান আউট হয়ে গেলেন ৬৮ বলে ৪০ রান করে। আর সে দায় কাঁধে নিয়েই যেন দলকে টানলেন শান্ত। আরেক অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে গড়লেন অবিচ্ছিন্ন ৯৬ রানের জুটি। তুলে নিলেন ক্যারিয়ারে নিজের পঞ্চম সেঞ্চুরি। আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম। সে সাথে গড়লেন একটি রেকর্ডও। প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেকে তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। ১৯২ বলে ৯টি চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি পূরন করা শান্ত দিন শেষে অপরাজিত আছেন ১০৪ রান করে। আর মুশফিক অপরাজিত আছেন ৭১ বলে ৪৩ রান করে। এ দুজনের কল্যাণে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে সংগ্রহ করেছে ২১২ রান। ফলে এগিয়ে থাকল ২০৫ রানে। আজ এই সংগ্রহটাকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ সেটাই দেখার অপেক্ষা।
এর আগে দ্বিতীয় দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার জেমিসন এবং টিম সাউদি তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন। দিনের প্রথম ঘণ্টায় বেশ চড়াও হয়ে খেলছিলেন এদুজন। শেষ পর্যন্ত মোমিনুল এসে ভাঙ্গেন এ দুজনের ৫২ রানের জুটি। ২৩ রান করা জেমিসনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মোমিনুল। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি জেমিসন। চার বল পর সাউদিকে বোল্ড করে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস থামিয়ে দেন মোমিনুল ৩১৭ রানে। ৩৫ রান করেন কিউই অধিনায়ক সাউদি। আর তাতে তার দল লিড পায় ৭ রানের। বাংলাদেশের পক্ষে তাইজুল নিয়েছেন ১০৯ রানে ৪ উইকেট। তবে মোমিনুল মাত্র ৪ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। যা টেস্টে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আগের সেরাটি ছিল ২৭ রানে ৩ উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০১৭ সালে।