সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনে দুই প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। একটি জিম্বাবুয়ের বোলার মুজারাবানি। আর অন্যটি বৃষ্টি। গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের শুরুতে বাগড়া বাধাল বৃষ্টি। দিনের শেষে দ্রুতই নেমে এলো আঁধার। বেরসিক প্রকৃতির বিরূপ আচরণে হারিয়ে গেল অর্ধেকের বেশি ওভার। মাঝের সময়টায় নাজমুল হোসেন শান্তর লড়াইয়ে আশা জিইয়ে রাখল বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় দিনেই সাধারণত অনেকটা ঠিক হয়ে যায় ম্যাচের গতিপ্রকৃতি। কিন্তু সিলেট টেস্টে এ দিন খেলা হয় মোটে ৪৪ ওভার। অধিনায়কের হাফ সেঞ্চুরিতে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান করে বাংলাদেশ। ফলে জিম্বাবুয়ের লিড পেরিয়ে স্বাগতিকরা এখন ১১২ রানে এগিয়ে। যদিও ম্যাচের এখনো দুদিন বাকি। উইকেটে থাকা শান্ত এবং জাকের আলিই এখন স্বীকৃত ব্যাটার। প্রথম ইনিংসে ন্যক্কারজনক ব্যাটিং করা বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় ইনিংসেও বলতে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। শান্ত ছাড়া আর কেউ ব্যাটিংয়ে তেমন নির্ভরতা দিতে পারেননি। অস্বস্তিময় ইনিংস শেষে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। আরেকটি হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি গেলেও মুমিনুল হকের ব্যাটিংয়েও ছিল না স্বস্তি।
আরও একবার হতাশ করেন মুশফিকুর রহিম। ফলে ম্যাচের গল্পটা নতুন করে লিখতে হবে শান্ত এবং জাকেরকে।
আগের রাতের টানা বৃষ্টির পর সকালেও বেশ কিছুক্ষণ চলে হালকা বর্ষণ। ভেসে যায় দিনের প্রথম সেশন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন ঘণ্টা পর দুপুর ১টায় শুরু হয় খেলা। শুরু থেকেই ব্লেসিং মুজারাবানির শর্ট বলের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারছিলেন না মাহমুদুল হাসান জয়। দিনের সপ্তম ওভারে শরীর বরাবর তাক করা বাউন্সারে আর টিকতে পারেননি এই ওপেনার। স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ। ৬৫ বলে তিনি করেন ৩৩ রান। এ নিয়ে টানা ১৭ ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করতে ব্যর্থ হলেন তিনি। সবশেষ ১০ ইনিংসে ৯ বারই তিনি আউট হলেন কট বিহাইন্ড বা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
জয়ের বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের দ্বিতীয় উইকেটের জুটি। এরপর আরেকটি পঞ্চাশছোঁয়া জুটি গড়েন মুমিনুল ও শান্ত। ক্রিজে নেমে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে ভিক্টর নিয়াউচির সুইং বোলিংয়ে ভুগতে থাকেন মুমিনুল। তবে ২৬ রানের মাথায় জীবন পান শান্ত। ওয়েসলি মাধভেরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শান্ত। কিন্তু সেটা নিতে পারেননি নিয়াশা মায়াভো। তবে মুমিনুলের ক্যাচ নিতে ভুল করেননি মায়াভো। নিয়াউচির অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট ডেলিভারি ঠিকঠাক খেলতে পারেননি। তার গ্লাভস ছুঁয়ে যাওয়া বল লুফে নেন জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক। ৬ চারের সাহায্যে ৮৪ বলে ৪৭ রান করেন মুমিনুল। টানা দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা হলো না মাত্র ৩ রানের জন্য।
ব্যাট হাতে যখন মুশফিকের উপর ভরসা খুঁজছিল দল, ঠিক তখনই প্রথম ইনিংসের মত আরো একবার ব্যর্থ হয়ে ফিরলেন তিনি। মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ৪ রান করে আউট তিনি। টেস্টে টানা চার ইনিংস ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টানা সাত ইনিংসে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ মুশফিক। গত বছর পাকিস্তান সফরে ১৯১ রানের ইনিংসের পর থেকেই রান নেই তার ব্যাটে। টানা ১২ ইনিংসে চল্লিশও ছুঁতে পারেননি মুশফিক।
দিনের বাকি অংশে আর উইকেট পড়তে দেননি অধিনায়ক শান্ত ও জাকের আলি। ৮৪ বলে ৭টি চারের সাহায্যে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি করেন শান্ত। অন্য প্রান্তে জাকের অবশ্য ছিলেন নড়বড়ে। বেশ কিছু বল কানায় লেগে অল্পের জন্য বেঁচে যান এই কিপার–ব্যাটসম্যান। তবে ৬০ বলে ২১ রানে অপরাজিত আছেন জাকের। ১০৩ বলে ৬০ রানে নতুন দিন শুরু করবেন শান্ত। চতুর্থ দিন নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে অর্থাৎ ৯টা ৪৫ মিনিটে শুরু হবে খেলা। জিম্বাবুয়ের পক্ষে মুজারাবানি ৫১ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।