শহীদ মিনার দৃশ্যমানে ১০ দফা সুপারিশ

বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন মেয়রের কাছে হস্তান্তর এবারো মিউনিসিপ্যাল স্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনারে একুশের কর্মসূচি পালন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

নবনির্মিত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারিও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে না। এর পরিবর্তে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে অমর একুশের কর্মসূচি পালন করা হবে। এই নিয়ে তৃতীয় বার অস্থায়ী শহীদ মিনারে মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জানাবেন চট্টগ্রামের মানুষ। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে আরো দৃষ্টিনন্দন ও দৃষ্টিগোচর করা এবং সর্বশ্রেণির মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নের পর সেখানে জাতীয় দিবসগুলোতে কর্মসূচি পালন করা হবে। কমিটি ১০ দফা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন গতকাল বুধবার সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন।

মেয়র আজাদীকে বলেন, কমিটি যে সুপারিশগুলো করেছে তা বাস্তবায়ন করা অল্প সময়ের মধ্যে সম্ভব না। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির আগে কোনোভাবে সুপারিশের আলোকে শহীদ মিনারকে উপযোগী করা যাবে না। তাই এবারও নবনির্মিত শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন না চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।

জানা গেছে, নবনির্মিত শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয় দাবি করে গত কয়েক মাস ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতিকর্মীরা।একইসঙ্গে দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় দিবসে এ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আপত্তি জানান। গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পরিবর্তে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ অবস্থায় শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান করতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানে ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে আহবায়ক করে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গত ১৬ জানুয়ারি শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন। গতকাল প্রতিবেদন জমা দেন।

কমিটির সমন্বয়ক হচ্ছেন নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার। সদস্যরা হচ্ছেনস্থপতি আশিক ইমরান, স্থপতি জেরিনা খান, প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, স্থপতি সোহেল মোহাম্মদ শাকুর ও স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর।

১০ সুপারিশ : শহীদ মিনারের বেদিটি বর্তমান স্থান থেকে আরো ১ দশমিক ৫ ফুট উঁচু করাসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে। অন্য সুপারিশগুলো হচ্ছেজাতীয় দিবসগুলোতে সাধারণ জনগণের নিরাপদে শ্রদ্ধা নিবেদনের সুবিধার্থে প্রকল্পের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে একটি নতুন র‌্যাম্প নির্মাণ এবং র‌্যাম্পের পেছনে দক্ষিণ পাশে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমূল জাতীয় দেশীয় গাছ লাগানো।

র‌্যাম্পের সামনে একটি এসেম্বলি করা ও র‌্যাম্পের সাইড ওয়াল দুটিতে গাঁথুনী না করে ট্রান্সপারেন্ট রাখা যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধক না হয়ে শহীদ মিনার দেখা যায়। পূর্বের শহীদ মিনারের বৃহৎ পরিসর শহীদ মিনারের দর্শনার্থী বা সকল নাগরিকদের একত্রিত (এসেম্বল) করার জন্য অগ্রভাগ হিসাবে উন্মুক্ত সবুজ পরিসর হিসাবে সংরক্ষণ করা।

প্রতিবেদনে বলা হয, শহীদ মিনারের পাশ্বস্থ দুটি দেয়াল শহীদ মিনার দেখতে বাঁধাগ্রস্থ করছে উল্লেখ করে দেয়াল দুটি অপসারণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ১৯৭৪ সালে স্থাপিত মূল শহীদ মিনারের মূল স্থপতি আহমদ জিল্লুর চৌধুরীর পরামর্শ অনুযায়ী শহীদ মিনারের চারটি স্তম্ভ এর উচ্চতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। এছাড়া প্লাজার দুইপাশের দেয়ালগুলি উচ্চতা কিছুটা হ্রাস করা অথবা পারফোরোটেড টাইপ করে দৃশ্যমান করা, দক্ষিণ পূর্বের উন্মুক্ত মঞ্চের স্ট্রেজের পিছনে গ্রীনরুম এর দেওয়ালের উচ্চতা ফ্লোর লেভেল থেকে ৬ ফুট বা স্ট্রেজ হতে ৪ ফুট রেখে অবশিষ্ট অংশ অপসারণ, লিলিপন্ড ওয়াটারবডি অপসারণ, মূল বেদীর দুই পাশে বাকানো গার্ডেন ওয়ালের উচ্চতা কমানো এবং পূর্ব পাশের প্রবেশ র‌্যাম্প ও সিঁড়ির মাঝস্থলের দেওয়াল অপসারণ করে পূর্ণাঙ্গ র‌্যাম্প করার সুপারিশ করা হয়।

জানা গেছে, ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ প্রকল্পের কাজ চলছে। ইত্যেমধ্যে ২০৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের আওতায় পুরনো শহীদ মিনারের আদল ঠিক রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনার ও উন্মুক্ত গ্যালারি। এছাড়া পুরনো পাবলিক লাইব্রেরি ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন ও পুরনো মুসলিম হল ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ৮ তলা ভবন। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের দিন চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে কোনো স্মৃতিসৌধ নেই। তাই ২১ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চসহ জাতীয় দিবসগুলো চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালন করা হয় বিজয় দিবসের কর্মসূচি। এরপর একই বছরের ২৭ ডিসেম্বর পুরনো কাঠামোটা ভাঙার কাজ শুরু হয়। একইসঙ্গে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে অস্থায়ী শহীদ মিনার করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর নবনির্মিত শহীদ মিনারে বিজয় দিবস উদযাপন করা নিয়ে গত একই বছরে ১৮ নভেম্বর ও ২ ডিসেম্বর দুটি মতবিনিময় সভা করেন মেয়র। এতে সংস্কৃতিকর্মীরা নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ছাড়া এ শহীদ মিনারে ফুল দিতে আপত্তি জানান।

জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বরের সভায় শহীদ মিনার দৃশ্যমান না হওয়ার জন্য নবনর্মিত মুসলিম ইনস্টিটিউট ও গণগ্রন্থাগার ভবনের সঙ্গে শহীদ মিনারকে যুক্ত করা ২১ ফুট উঁচু প্লাজা’তে দায়ি করা হয়। এ প্লাজার কারণে নিচের সড়ক থেকে প্লাজার উপরে থাকা শহীদ মিনার দৃশ্যমান নয় বলে দাবি করা হয়। সেটা ভেঙে ফেলারও দাবি উঠে ওই সভায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকয়েকদিনেই ভরাট হয়ে যায় চাক্তাই খালের মুখ
পরবর্তী নিবন্ধবইমেলায় থাকছে ১৫৫টি স্টল