শহীদ তিতুমীর : ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অনন্য ব্যক্তিত্ব

| মঙ্গলবার , ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

তিতুমীর (১৭৮২১৮৩১)। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি অত্যাচারিত জমিদার ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও তার বিখ্যাত বাঁশের কেল্লার জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিতুমীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছে ব্রিটিশ সেনাদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় এই বাঁশের কেল্লাতেই শহীদ হন। তিতুমীর ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে জানুয়ারি ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার চাঁদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলী। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ মীর হাসান আলী এবং মাতার নাম আবিদা রুকাইয়া খাতুন। তিতুমীরের প্রাথমিক শিক্ষা হয় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে। পরবর্তীকালে তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসাতে লেখাপড়া করেন। ১৮ বছর বয়সে তিতুমীর কোরআনে হাফেজ হন এবং হাদিস বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভ করেন। একই সাথে তিনি বাংলা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় পারদর্শীতা অর্জন করেন। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে তিতুমীর মক্কায় হজ্জব্রত পালনের উদ্দেশ্যে যান। তিনি সেখানে আরবের স্বাধীনতার অন্যতম পথপ্রদর্শক সৈয়দ আহমেদ শহীদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ও ওয়াহাবী মতবাদে অনুপ্রাণিত হন। সেখান থেকে এসে (১৮২৭) তিতুমীর তার গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিতুমীর জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‘দাঁড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্রতর হতে থাকে। তিনি তার অনুসারীদের প্রশিক্ষণ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করে তোলেন।

১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে অক্টোবর বারাসতের কাছে নারিকেল বাড়িয়া গ্রামে তারা বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। তিতুমীর বর্তমান চব্বিশ পরগনা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অধিকার নিয়ে সেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্থানীয় জমিদার এবং ব্রিটিশ বাহিনী তিতুমীরের হাতে বেশ কয়েকবার পরাজয় বরণ করে। অবশেষে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ই নভেম্বর ব্রিটিশ সৈন্যরা তাদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তিতুমীর স্বাধীনতা ঘোষণা দিলেন, ‘ভাই সব, একটু পরেই ইংরেজ বাহিনী আমাদের কেল্লা আক্রমণ করবে। লড়াইতে হারজিত আছেই, এতে আমাদের ভয় পেলে চলবে না। দেশের জন্য শহীদ হওয়ার মর্যাদা অনেক। তবে এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে’। ১৯ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিংএর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। ১৯ ই নভেম্বর তিতুমীর ও তার চল্লিশ জন সহচর শহীদ হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধরেলক্রসিং-এ নিরাপদ ব্যবস্থা চাই