শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়(১৯২০–১৯৯৯)। কবি, কথাসাহিত্যিক ও নাট্যকার। তিনি ১৯২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতার কালীঘাটে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা সুরুচি দেবী। তার শৈশবের বছর সাতেক কাটে মামার বাড়িতেই। ১৯৩৪ সালে চলে এলেন পৈতৃক বাড়ি, বাংলাদেশের নড়াইলে। এখানে ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ফিরে যান কলকাতায়। কলকাতার আশুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. ও পরে বি.এ.পাস করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। ইন্ডিয়ান কপার কর্পোরেশনে ইনস্পেক্টরের চাকরি নিয়ে চলে যান ঘাটশিলা। সেখানে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৫–এ ‘এম এল ব্যানার্জি অ্যান্ড সন্স’ নামে এক জাহাজ কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ওয়ালটেয়র চলে যান। এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। উপ–অধিকর্তা হিসাবে ১৯৮১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। এছাড়া ১৯৫৫ সালে হতে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের লোকরঞ্জন শাখার নাট্য পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছেন। ১৯৩৭ সালে যখন শচীন্দ্রনাথ সতেরো বৎসরের কিশোর, তার প্রথম গল্প ‘বুভুক্ষা’ প্রকাশিত হয় ‘মানসী‘ পত্রিকা আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায়। কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন। গল্পটি পড়ে তিনি এমন মুগ্ধ হন যে, পকেট থেকে নিজের কলমটি বের করে তার হাতে তুলে দেওয়ার সময় বলেছিলেন -‘তোমার জীবনে সুখ আসবে, দুঃখ আসবে, কিন্তু এই কলমটি তুমি ছেড়ো না। মনে রেখো, এই কলমের জন্যই তুমি জন্মেছ’। শরৎচন্দ্রের সেকথা রেখেছেন বলা চলে। ১৯৪১ সালে তিনি লেখেন প্রথম নাটক ‘উত্তরাধিকার’। সে বছরই কলকাতার বালিগঞ্জ শিল্পী সঙ্ঘের উদ্যোগে তা মঞ্চস্থও হয়। ১৯৪৪–৪৫ সালে লেখেন প্রথম উপন্যাস ‘এ জন্মের ইতিহাস’। সরোজকুমার রায়চৌধুরী সম্পাদিত ‘বর্তমান’ পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তা ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। দেবদাসীদের কাহিনী অবলম্বনে রচিত উপন্যাস ‘জনপদবধূ‘ এবং এটি দীর্ঘ কাল মঞ্চস্থ হয়েছে কলকাতার বিশ্বরূপা, স্টার বা রঙমহলে। ‘এই তীর্থ’ উপন্যাস থেকে হয়েছে ‘জীবন সংগীত’ চলচ্চিত্র। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘মার্কো’, ‘মেমোরিয়ালের পরী’, ‘বিভূতিভূষণের মৃত্যু’, ‘চন্দ্রলোক থেকে আসছি’–র মতো গল্প, ‘ক্রৌঞ্চদ্বীপের ফকির’ উপন্যাস। এছাড়াও রয়েছে তাঁর অনেক রচনা সম্ভার। যা বাংলা সাহিত্যে স্মরণীয় হয়ে আছে। ১৯৮৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাসের জন্য বঙ্কিম পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৯৯ সালের ২৬ মে মৃত্যুবরণ করেন।