চট্টগ্রামের ভূমি জরিপ ট্রাইব্যুনাল বা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ভূমির রেকর্ড সংশোধনে মামলা দায়েরের সময়সীমা আগামী মাসে শেষ হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের দেওয়ালে এ সংক্রান্ত নোটিশও টাঙানো হয়েছে। নোটিশ অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মামলার ফাইলিংয়ের মেয়াদ শেষ হবে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে আইনজীবী সমাজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।
তাদের ভাষ্য, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সময়সীমা বাড়ানো দরকার। মামলা দায়েরের সময়সীমা যে শেষ হচ্ছে সেটি অনেকে জানেন না। কাজী তারেক আহমেদ নামে একজন আইনজীবী ফেসবুকে লিখেছেন, ৯ সেপ্টেম্বর বিএস সংশোধন বা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মামলা দায়েরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এখনো যারা রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলা দায়ের করেননি তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিন।আরেকজন লিখেছেন, সময়সীমা বাড়ানো হোক। আশা করছি যে, জনস্বার্থে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি আমলে নেবেন।
এদিকে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার জন্য সময়সীমা বৃদ্ধি চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। সাধারণ আইনজীবীদের চাহিদা অনুযায়ী আবেদনটি করা হয়। আবেদনে বলা হয়, সরকারের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০–এর ১৪৫ ক ধারার ১ ও ২ উপধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২ বছরের জন্য চট্টগ্রামে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। যার মেয়াদ আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।
আবেদনে আরো বলা হয়, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। ভূ–প্রাকৃতিকভাবে অনেক বড়। জেলার শিক্ষিত–অশিক্ষিত বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করার জন্য সময়সীমা সম্পর্কে অবগত নন। অধিকন্তু প্রচার প্রচারণা কম হওয়ায় বহু মানুষ নির্ধারিত সময়ে মামলা ফাইলিং করতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে অত্র ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সময়সীমা ন্যূনতম আরো ১ বছর বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সর্বসাধারণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে ও ভবিষ্যৎ সমস্যার সমাধানের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য বৃদ্ধি করে গত ২৪ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম আরো এক বছর থাকবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ট্রাইব্যুনাল যেহেতু আরো এক বছর থাকবে সেহেতু ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সময়সীমা আরো এক বছর বাড়ানো হোক।
সিনিয়র দেওয়ানী আইনজীবী কাশেম কামাল আজাদীকে বলেন, ভূমি অফিসে আবেদন করে সব রকম রেকর্ড সংশোধন সম্ভব নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভূমি অফিস রেকর্ড সংশোধনের সাহস করে না। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় দেওয়ানী আদালতেও ভূমি রেকর্ড সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল যখন ছিল না তখন এ ধারায় মামলা হতো। তবে সেখানে অনেক সময় লেগে যেত। এছাড়া আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। যার কারণে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনের আন্দোলন করেছিলাম আমরা। ২০০৫ সালে আইন হওয়ার পর ২০১২ সালে ৪১ জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠন হলেও চট্টগ্রামে হয়নি। চট্টগ্রামে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল গঠনে অনেক জায়গা থেকে বাধা ছিল। কিন্তু আমরা হার মানিনি। আমরা আন্দোলন বন্ধ করিনি। মন্ত্রণালয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়েছি, কেন ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন। দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২০২৩ সালে আমরা ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল পেয়েছি। দুই বছরের জন্য চট্টগ্রামে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালটি গঠন হয়েছিল। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু প্রচারণার অভাবে অনেকে এখনো তাদের রেকর্ড সংশোধনের মামলা করতে পারেনি। এজন্য সময়সীমা বৃদ্ধি করার বিষয়টি উঠে এসেছে। এটি অবশ্যই দরকার। মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী আজাদীকে বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারায় জমি রেকর্ড সংশোধনের মামলা দায়ের এবং উক্ত মামলা শেষ হওয়া সময়সাপেক্ষ বিষয়। এজন্য ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের আবির্ভাব হয়েছিল। এ ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড সংশোধন তুলনামূলক সহজ। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী দেওয়ানী আদালতে যে মামলা দায়ের হতো সেখানে অনেক রকম পিটিশন দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে শুধুমাত্র রেকর্ড সংশোধন বিষয়ে ফোকাস করা হয়। নানা রকম পিটিশন দেওয়ার সুযোগ নেই। যার কারণে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল ভূমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য উপযোগী স্থান। তিনি বলেন, আগামী মাসে এ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। আমরা চাইছি, অন্তত আরো ১ বছর মামলা দায়েরের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হোক।
প্রসঙ্গত, ভূমির মূল মালিক এবং দখলদার হওয়া সত্ত্বেও যদি খতিয়ানে মালিকীয় ও দখলীয় ভূমির মালিকানা অন্যের নামে লিপিবদ্ধ হয় বা খতিয়ানে করণিক ভুল থাকে তখন ভূমি অফিসে আবেদন এবং ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।