সরকারি রাজস্ব ফাঁকি, হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, মাদক ব্যবসাসহ নানা অবৈধ পন্থায় সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে লোহাগাড়া উপজেলার আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়েছে দুদক। এতে বের হয়ে এসেছে, আব্দুল হক ৩৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ করছেন। এছাড়া তিনি দুদকে
দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ২৬২ টাকার স্থাবর ও ১৬ লাখ ২ হাজার ১৬৯ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট ৫০ হাজার ৭৪ হাজার ৪৩১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন। আব্দুল হক বসবাস করছেন নগরীর দেব পাহাড়ের এসকাডেট লিবার্টির একটি ফ্ল্যাটে। এ ঘটনায় দুদকের পক্ষ থেকে আব্দুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়–২ এর উপপরিচালক মো. আতিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি, অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনকারী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, স্বর্ণ চোরাকারবারী, মাদক ব্যবসা ও ইয়াবা ব্যবসা করে জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে আব্দুল হকের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির সুপারিশ করে পূর্ববর্তী অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাবেক উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আব্দুল হক বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারির নির্দেশ দেয় দুদক প্রধান কার্যালয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর তার বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ জারি করা হয়। তিনি সৌদি আরব অবস্থান করায় তার পক্ষে তার বড় ছেলে এরশাদুল হক উক্ত আদেশ গ্রহণ করেন এবং সময় চেয়ে আবেদন করলে সময় দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ২১ ডিসেম্বর আব্দুল হক দেশে ফিরে দুদক কার্যালয়ে গিয়ে তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। উক্ত সম্পদ বিবরণীতে তিনি দুই কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যায়, তার নামে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ২৬২ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।
অপরদিকে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮২১ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাইকালে পাওয়া যায় তার নামে ৪৩ লাখ ৯০ হাজার ৯৯০ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৬ লাখ ২ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। স্থাবর ও অস্থাবর মিলে আব্দুল হক সর্বমোট ৫০ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩১ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন করেছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মামলার এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, হেবাকৃত ও সেলামিতে প্রাপ্ত দোকান ঘরের ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে গৃহীত অগ্রিম বাবদ আব্দুল হকের কাছে ২১ লাখ টাকা পাওয়া যায়। যা তিনি দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন। ২০১৫–১৬ করবর্ষ হতে ২০২০–২১ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি সর্বমোট ২ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৯ টাকা আয় করেছেন। তিনি ২০১৫–১৬ করবর্ষ হতে ২০২০–২১ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ব্যয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৫ টাকা ব্যয় প্রদর্শন করেছেন। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, উক্ত দায় ব্যতীত আব্দুল হক এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ২ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ২৫২ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায় এবং একই সময়ে তিনি ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৬৫ টাকার পারিবারিক ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৭৯ লাখ ২০ হাজার ৫১৭ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৩ লাখ ২৭ হাজার ৮৫৯ টাকা। এক্ষেত্রে আব্দুল হকের অর্জিত সম্পদের চেয়ে ৩৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৮ টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়। অর্থাৎ আব্দুল হক ৩৫ লাখ ৯২ হাজার ৬৫৮ টাকার সম্পদ জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ অর্জন ও ভোগ করেছেন।
মামলার বাদী মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তে অন্য কারো বিষয় উঠে আসলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।