ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। আটটি স্টেশনে থেমে যাত্রী উঠানামা করবে এই ট্রেন। তবে লোহাগাড়ার ‘আমিরাবাদ’ স্টেশনে থামবে না ঈদ স্পেশাল ট্রেন। যার ফলে স্থানীয়রা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা।
জানা যায়, আগামী ৮ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ও ঈদের পরদিন হতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এবং ১৭ ও ১৮ এপ্রিল এই পথে চলবে দুটি বিশেষ ট্রেন। যাত্রাপথে ট্রেন থামবে ৮টি স্টেশনে। আর প্রথমবার ট্রেনে চড়ে ঈদে বাড়ি যাতায়াতের সুযোগ পাবেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোকজন। এতে সড়ক পথে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপও কিছুটা কমবে। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটের ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে সকাল ৭টায় কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে পৌঁছাবে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। আবার কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৭টায় ছেড়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে রাত ১০টা ৫ মিনিটে। পথে ট্রেনটি থামবে ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু স্টেশনে। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে গাড়ি সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া ও যানজটসহ নানা ভোগান্তি পেরিয়ে বাড়ি ফেরেন দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মানুষ। এবার অনেক এলাকার মানুষ ট্রেন যাত্রার সুবিধা ভোগ করতে পারলেও বঞ্চিত হচ্ছেন লোহাগাড়ার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে উপজেলার আধুনগর খাঁন হাট বাজার ও চুনতি ইউনিয়নের হাজী রাস্তার মাথা এলাকা থেকে লোহাগাড়া রেল স্টেশনে আসা–যাওয়ার দুটি রাস্তা রয়েছে। উভয় দিকে অভ্যন্তরীণ সড়কের কাজ চলমান। মহাসড়ক থেকে রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রতিটি সড়কের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। রেলস্টেশনের সিংহভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্টেশনের উভয় পাশে যাত্রী উঠানামার জন্য টার্মিনালের কাজও প্রায় শেষ হয়েছে। লোহাগাড়ার স্টেশনে ট্রেন থামলে যাত্রী উঠানামা করতে কোনো সমস্যা হতো না। তারপরও কেন স্টেশনে ঈদ স্পেশাল ট্রেন থামবে না তার সঠিক কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে এই নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে বাণিজ্যিক ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। বিপুল যাত্রী চাহিদা থাকলেও গত তিন মাস ধরে ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চলছে মাত্র ২টি ট্রেন। এই রুটে চলা ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ও ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’ বিরতিহীন হওয়ায় রেললাইনের সুফল পাচ্ছেন না দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীরা। লোহাগাড়ার বুকের উপর দিয়ে প্রতিদিন ট্রেন যাতায়াত করলেও ঈদ স্পেশাল ট্রেন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ৮টি স্টেশনে ট্রেন থেমে যাত্রী উঠানামা করবে ঘোষণা দিলেও সেই তালিকায় বাদ পড়েছে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ স্টেশনের নাম। কেন আমিরাবাদ স্টেশনে ট্রেন থামবে না এর সঠিক কারণ জানা যায়নি। এই নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না।
বড়হাতিয়া ইউনিয়নের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবদুস ছালাম জানান, প্রতিদিন ট্রেন চলাচল করতে দেখি। দীর্ঘশ্বাস ফেলি। আশা করছিলাম শেষ বয়সে এসে হলেও ট্রেনে চড়ার ইচ্ছে পূরণ হবে। কিন্তু রেললাইন উদ্বোধনের চার মাস অতিবাহিত হলেও ট্রেনে চড়ার সুযোগ হয়নি। জীবদ্দশায় ট্রেনে চড়ার সেই সুযোগ হবে কিনা আল্লাহই ভালো জানে। মোহাম্মদ সোহাগ মিয়া নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন, ঈদ উপলক্ষে স্পেশাল ট্রেনটি লোহাগাড়ায় স্টেশনে ট্রেন থামবে না এই নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথা ব্যাথা দেখছি না।
আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হোছাইন মুহাম্মদ শারফু বলেন, রেললাইন নিয়ে লোহাগাড়ার মানুষ খুবই উচ্ছ্বাসিত ও আশান্বিত ছিল। কিন্তু প্রতিদিন বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন চলাচল করতে দেখি। শুধু চেয়ে থাকি। কোনদিন ট্রেন করে যাতায়াত করার সুযোগ হয়নি। মনে করছিলাম ঈদ স্পেশাল ট্রেনে হলেও চড়ে এলাকার মানুষ উপভোগ করবো। কিন্তু সেই সুযোগও হচ্ছে না, কারণ লোহাগাড়ার স্টেশনে নাকি স্পেশাল ট্রেনটিও থামবে না। লোহাগাড়া স্টেশনের আগে–পরে সাতকানিয়া ও চকরিয়া স্টেশনে স্পেশাল ট্রেন থামতে পারলেও, কেন লোহাগাড়া উপজেলাবাসী এতো অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আনোয়ার কামাল জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো ঈদকে সামনে রেখে স্পেশাল ট্রেন চালানোর খবর শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু এই স্পেশাল ট্রেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের একাধিক স্টেশনে থামলেও থামবে না লোহাগাড়ায়। সেটা শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। লোহাগাড়াবাসীরও স্বপ্ন ছিল ঈদ স্পেশাল ট্রেনে করে বিভিন্ন গন্তব্যে আসা–যাওয়া করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। লোহাগাড়াবাসী কেন এতো অবহেলার শিকার। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ম্যানেজার রতন কুমার চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে ঈদকে সামনে রেখে স্পেশাল ট্রেন লোহাগাড়ায় স্টেশনে থামবে না। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ট্রেন কোন কোন স্টেশনে থামবে সেটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিডিউল করে দেন। আমরা শুধু সেটা বাস্তবায়ন করে থাকি।