লোহাগাড়ায় অগ্নিঝুঁকিতে মার্কেট ও আবাসিক ভবন

কোনো ভবনে নেই ফায়ার সনদ

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ৪ মে, ২০২৪ at ১০:১৫ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক মার্কেটসহ প্রায় ২ হাজার আবাসিক ভবন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণ, যত্রতত্র হোটেলরেস্তোঁরা তৈরি ও জলাধার ভরাটসহ নানা কারণে দেখা দিয়েছে অগ্নি ঝুঁকি। উপজেলা সদরে বেশিরভাগ মার্কেট ও বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। আগুন নেভানোর নেই ব্যবস্থা। ফলে আগুন কিংবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।

জানা যায়, উপজেলা সদরে সুপার মার্কেট, মোস্তফিজুর রহমান মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, মোস্তফা মার্কেট, চৌধুরী প্লাজা, মোস্তফা সিটি, সিকদার সেন্টার, এমদাদিয়া মার্কেট, লিয়াকত মার্কেট, বদিউর রহমান মার্কেট, আইচ পার্ক, লোহাগাড়া শপিং, হোছাইন মার্কেট, আপন শপিং, কর্ণফুলী সিটি, স্টার সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, সুমাইয়া প্লাজায় প্রায় ৫ হাজারের অধিক দোকান রয়েছে। কোন মার্কেটে নেই আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক ব্যবস্থাও। নেই ফায়ার সনদ। যে কোন সময় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল। এছাড়াও উপজেলার পদুয়া, চুনতি, আধুনগর, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, কলাউজান ও চরম্বা এলাকায় ব্যস্ততম দোকান ও মার্কেটে আগুন নির্বাপকের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই। উপজেলায় প্রায় দুই হাজার বহুতল আবাসিক ভবন রয়েছে। এসব ভবনে নেই ফায়ার নিরাপত্তার ব্যবস্থা। ভবন নির্মাণে ফায়ার সনদ লাগে সেটিও জানেন না ভবন মালিকরা।

সরেজমিনে একাধিক মার্কেট ও ভবনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরে সুপার মার্কেট, লোহাগাড়া শপিং, হোছাইন মার্কেট, আপন শপিং, কর্ণফুলী সিটি, স্টার সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, সুমাইয়া প্লাজাসহ আরও নামবিহীন মার্কেট একটির সাথে আরেকটি লাগানো। এসব মার্কেটের ভেতরে দিনেও সূর্যের আলো ঢুকে না। চুল পরিমাণ জায়গাও খালি রাখা হয়নি। এসব মার্কেটে অগ্নি নির্বাপকের নেই ব্যবস্থা। মার্কেটগুলোতে রয়েছে খাবার দোকান। এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে বিদ্যুৎ লাইন। অধিকাংশ মার্কেটের গলি সরু। জরুরি প্রয়োজনে পাওয়া যাবে না পানি। আবাসিক ভবনগুলোও ঘনবসতিপূর্ণ। একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনের মাঝখানে রাখা হয়নি দূরত্ব। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন যন্ত্রপাতি নিয়ে দ্রুত পৌঁছতে পারবে না ঘটনাস্থলে। কোন মার্কেটে কিংবা আবাসিক ভবনে দেখা যায়নি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। এছাড়া প্রায় সবমার্কেটে বৈদ্যুতিক সুইচ ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাখা হয়েছে। গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে মালামাল। এই অবস্থায় অগ্নি ঝুঁকি কমাতে বৈদ্যুতিক ফ্যান লাগানো, পুরাতন তার (ক্যাবল) পরিবর্তন, নিরাপত্তার জন্য বেশ কিছু দোকানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দেয়া উচিত। এছাড়া অনেক মার্কেটে নেই পানির ট্যাংক। মার্কেটের সামনে এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে বৈদ্যুতিক তার। মার্কেট ও আবাসিক ভবনে সিলিন্ডার দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপক প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত বলে মনে করেন সচেতন মহল।

লোহাগাড়া শহর উন্নয়ন কমিটির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম জানান, যেসব বহুতল ভবন বানানো হয়েছে, সেগুলো অগ্নি নিরাপত্তার কোনো তোয়াক্কা করেননি। ফলে বিশাল এক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাই ঝুঁকি এড়াতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

ভবন মালিক নাছির উদ্দিন জানান, গ্রামে বহুতল ভবন করতে ফায়ার সনদ নিতে হয় এটি প্রথম শুনেছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও কোনদিন বলেননি। ফোরকান টাওয়ারের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ফোরকান টাওয়ার ব্যতিত লোহাগাড়ায় অন্য কোন ভবনে অগ্নি নির্বাপকের ব্যবস্থা নেই। প্রতি বছর বিছিন্নভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগুন লেগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্তৃপক্ষের অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তিনি আরো বলেন, সঠিক আইন প্রয়োগের অভাবেই বিভিন্ন মার্কেট ও ভবন মালিকরা এসব বিষয়ে অসচেতন থেকে গেছেন। উপজেলার মার্কেট ও ভবনগুলোর বেশির ভাগই গড়ে ওঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। বিশেষ করে উপজেলা সদর এলাকায় ভবন ও মার্কেটগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ এখানে একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনের মাঝখানে দূরত্ব রাখা হয়নি।

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা রুবেল আলম জানান, লোহাগাড়ায় কোন ভবনের ফায়ার সনদ নেই। মার্কেটগুলো খুবই অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ। কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আমরা মার্কেটগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করবো। যাতে তারা পর্যাপ্ত ফায়ার সেফটি অনুসরণ করে মার্কেট ও ভবন পরিচালনা করেন।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান জানান, আমরা এই বিষয়ে মিটিং করেছি। সতর্ক থাকার জন্য মাইকিং করেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রক্সি দিতে এসে আটক ভুয়া পরীক্ষার্থী