২০১৩ সালে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর ২০১৯ সালে এটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নিত করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নিত হওয়ার ৫ বছর অতিবাহিত হলেও তৃতীয় শ্রেণীর মাত্র ৮ জন লোকবল দিয়ে চলছে কার্যক্রম। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় সহস্রাধিক মানুষ বসবাস করে এই উপজেলায়। তাই পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকায় অগ্নিকাণ্ডসহ নানা দুর্ঘটনায় কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এই স্টেশনের কর্মীদের।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দ্বিতীয় শ্রেণীর এই স্টেশনে ১৬ জন ফায়ার ফাইটার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৮ জন। এছাড়া চারজন ড্রাইভার, ২ জন লিডার, ১ জন সাব অফিসার, ২ জন বাবুর্চি, ঝাড়ুদার ১ জনসহ থাকার কথা ছিল অ্যাম্বুলেন্স, পানিবাহী প্রথম কল ও দ্বিতীয় কল গাড়ি। কিন্তু রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনে নেই অ্যাম্বুলেন্স ও রেসকিউ ইউনিট। পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে বাঁচাতে অভিযানের জন্য নেই কোনো ডুবুরিও। বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ার ৩০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বসতঘর, গৃহপালিত পশু ও দোকানপাট পুড়ে গেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
সূত্রে জানা গেছে, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার অগ্নিনির্বাপণে একমাত্র ভরসা পৌরসভা এলাকার রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার পাশে অবস্থিত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। যাদের উত্তর ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি এলাকার অগ্নি নির্বাপণে ছুটে চলতে হয়। সম্প্রতি উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নে অগ্নিকাণ্ডে ৪টি বসতঘরের সবকিছু পুড়ে যায়। একইভাবে পৌরসভার মুরাদনগর এলাকায়ও অগ্নিকাণ্ডে দুই বসতঘর সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের টিমে থাকে মাত্র ৮ জন সদস্য দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে।
এলাকাবাসীরা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ফায়ার সার্ভিসের লোকবল না আসায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাদের। এছাড়া সাম্প্রতিক ঝড়ো হাওয়ায় কাপ্তাই সড়কের একাধিক স্পটে গাছ পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
একই সময়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও মাত্র ৮ জন লোকবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে এসব এক এক করে অপসারণে দীর্ঘ সময় যেমন অপেক্ষা করতে হয়েছে তেমনি হিমশিম খেতে হয়েছে কাজ করতে গিয়েও।
ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর নদী কিংবা পুকুরে ডুবে প্রচুর মানুষ মারা যায়। কেউ যদি নদী কিংবা পুকুরে ডুবে যায় রাঙ্গুনিয়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়ার পরও জনবল সংকটের কারণে উদ্ধারে অভিযান চালাতে পারেন না। অনেক সময় চট্টগ্রাম নগরীতে ডুবুরিকে খবর দেয়া হলেও তারা আসতে আসতে পানিতে ডুবে প্রাণহানি ঘটে যায়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের রাঙ্গুনিয়া স্টেশন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সুমন বলেন, ২০১৯ সালে স্টেশনটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে ৮ জন ফায়ার ফাইটার নিয়ে চালাতে হচ্ছে স্টেশনের কার্যক্রম। লোকবলের সংকট হওয়ায় অগ্নি–নির্বাপণে অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের।
নদী কিংবা পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে খবর পেলেও ডুবুরি না থাকায় অনেক সময় উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।
বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা অন্য কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও রেসকিউ ইউনিট ও অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়।
ঘটে যায় প্রাণহানি। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার স্টেশনের কর্মীদের বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, জনবল সংকট কাটিয়ে উঠলে এলাকার মানুষ আরো বেশি সেবা পাবেন। পর্যাপ্ত লোকবল, ডুবুরি, রেসকিউ ইউনিট ও অ্যাম্বুলেন্সের জন্য স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিষ্টরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এদিকে সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা। তিনি বিষয়টি তদারকি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।