চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের হাজার কোটির বেশি টাকা দামের ভূমি লালদিয়ার চরে কন্টেনার টার্মিনাল করার আগ্রহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন ডেনিস শিপিং জায়ান্ট মার্কসলাইন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী গতকাল এই আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রস্তাব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেছেন।
৪০ বছরের বেশি সময় ধরে অবৈধ দখলে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ভূমি লালদিয়ার চরে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে আছে। নদী পাড়ের চমৎকার এই স্থানটিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও এতদিন কিছু হয়নি। ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত রয়েছে প্রায় ৫২ একর জায়গা। জায়গাটিতে টার্মিনাল করার জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং প্রতিষ্ঠান মার্কসলাইন প্রস্তাব দিয়েছে। ডেনিস এই কোম্পানিটি বিশ্বের শিপিং সেক্টরের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। চট্টগ্রাম বন্দরে যা কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয় তার প্রায় এক–তৃতীয়াংশ হলো মার্কসলাইনের। মার্কসলাইন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্দরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে ব্যবসা–বাণিজ্য করলেও এই প্রথম তারা চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে আগ্রহ দেখিয়েছে। তারা চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে লালদিয়ার চরকে এই অঞ্চলে নিজেদের বাণিজ্যিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় বলে সূত্র জানিয়েছে।
অবশ্য তারা কি শুধু চট্টগ্রাম বন্দরে আসা জাহাজের কন্টেনার এখানে হ্যান্ডলিং করবে নাকি মাতারবাড়িতে তাদের বড় জাহাজ এনে ওখান থেকে ফিডার জাহাজে লালদিয়ায় কন্টেনার পরিবহন করবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে এখনো কেউ স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তারা যে চট্টগ্রামে ব্যবসা করতে আগ্রহী তা স্পষ্ট। প্রাথমিকভাবে তারা প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় বলে বন্দর সূত্র জানিয়েছে।
ইতোপূর্বে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আগ্রহ দেখানো মার্কস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবার্ট মার্কস উগলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তিনি লালদিয়ায় একটি নতুন কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মার্কসের ওই প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবে।
বাসস জানায়, মার্কস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রবার্ট মার্কস উগলা এবং বাংলাদেশে ডেনিশ শার্জস দ্য অ্যাফেয়ার্স অ্যাস্রেস বি কার্লসেন গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৫০টির বেশি ডেনিশ কোম্পানি কাজ করছে এবং মার্কস গ্রুপ এখন লালদিয়ায় এপিএম টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বন্দর উন্নয়নে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়নে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে তার সরকার। মার্কস গ্রুপের প্রধান নির্বাহীকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে এবং সরকার পায়রা বন্দর নির্মাণ করেছে, যা শিগগিরই চালু হবে। ভারত, নেপাল এবং ভুটানকে পারস্পরিক সুবিধার জন্য এই বন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এসব বন্দরে, বিশেষ করে পায়রা বন্দরে অনেক সুযোগ ও সুবিধা থাকবে।
বৈঠকে মার্কস গ্রুপের প্রধান নির্বাহী বলেন, বাংলাদেশে কন্টেনার শিপিং এবং লজিস্টিক সাপোর্টের ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে এর প্রতিফলন ঘটবে।
তিনি বাংলাদেশে বন্দর ও লজিস্টিক সাপোর্টের উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, এসব খাতে অনেক সুযোগ রয়েছে। এইচঅ্যান্ডএম, এমঅ্যান্ডএস, ওয়ালমার্ট এবং অন্য বড় কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে আরও আরএমজি পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহাইল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।