অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে ফায়ার লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের জন্য বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নীরব ভূমিকা পালন করছেন ঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। এছাড়া অনেকের নেই ফায়ার এক্সটিংগুইশার (অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী ফায়ার লাইসেন্স নিতে আগ্রহী না। দুই বছর আগে নগরীর ২৯টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করে মার্কেটের মূল ফটকে ব্যানার সাঁটিয়ে দেয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। একইসাথে ব্যবসায়ীদের অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি লাইসেন্স না থাকলে ইস্যু অথবা নবায়ন করতে বলা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা তৈরি করার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বারবার ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে ধর্ণা দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের চিঠি পাঠানোর পরেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা বারবার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের দেশে সাধারণত ১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এই সময়টাতে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। সময়টা শীতকাল হওয়ায় আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলিরহাট মার্কেট। লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুটকিপট্টি, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট ও ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকিরহাট মার্কেট, নয়াবাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলি বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দীঘির পাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গুলজার মার্কেট। নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজুদ্দীন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরীবাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট ও কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিনিরাপত্তায় দেশের নাগরিকরা বেশি সচেতন নন। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বেশি হয়। প্রায় আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আইন মেনে নির্মিত হচ্ছে না। গলিগুলো সরু। এসব সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ অসম্ভব। এছাড়া পুকুর কিংবা জলাধার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে আর কিছুই করার থাকবে না। তাই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে প্রত্যেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এঙটিংগুইশার রাখতে হবে। পাশাপাশি আগুন নেভাতে শপিং সেন্টারগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও ছয়তলার উপরে প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বৈদ্যুতিক তারে কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বঙ ও ডিমান্ড বঙের নিরাপদ অবস্থানে থাকা এবং স্মোক ও হিট ডিটেক্টর রাখা এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন আজাদীকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের তাগাদার প্রেক্ষিতে আমরা বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের ফায়ার লাইসেন্স ইস্যু কিংবা নবায়নের জন্য উদ্বুব্ধ করেছি। ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে অনেক ব্যবসায়ী লাইসেন্স নিয়েছেন এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম ফায়ার এঙটিংগুইশারও কিনেছেন। আমাদের সমিতির অধীন ৮০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫০ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে।
তামাকুমণ্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল আজাদীকে বলেন, আমাদের মার্কেটে অনেকের কাছে অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম আছে। যাদের নেই তাদেরকে নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার আজাদীকে বলেন, অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবসায়ীদের আমরা দীর্ঘদিন ধরে তাগাদা দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোতে পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের উদ্বুব্ধ করছেন। যাতে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম কিনেন।