চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক লবণবাহী গাড়ি থেকে ঝরছে পানি। সেই পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে মহাসড়ক। সেখানে চলন্ত গাড়ি সামান্য ব্রেক কষলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। লবণবাহী গাড়িতে জিইওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না।
জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লবণ উৎপাদন হয়। নৌপথ ও স্থল পথে এসব লবণ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট ও পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ পরিশোধনাগার রয়েছে। এসব স্থান ছাড়াও ঢাকা, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ পরিশোধনাগার রয়েছে। নৌপথে পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় মূলতঃ সড়ক পথে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানে করেই লবণ পরিবহন করা হয়। নিয়মানুযায়ী লবণবাহী গাড়িতে জিইওট্যাক্স ব্যবহার না করায় রাস্তায় পানি চুইয়ে পড়ে। এর উপর কাঁচা মাটি পড়ে আস্তরণ সৃষ্টি হয় এবং রাতে কুয়াশার স্পর্শে তা আঠাল হয়ে পড়ে। ফলে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই আঠাল আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে; ঘটে দুর্ঘটনা।
প্রতিদিন মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণহানি। আবার অনেকে আহত হয়ে পঙুত্ববরণ করছেন।
এদিকে, গত ১৫ ডিসেম্বর উপজেলার আমিরাবাদ খালেকের দোকান এলাকায় যাত্রীবাহী বাসের সাথে মিনি ট্রাক ও ১২ ডিসেম্বর চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায় ট্রাকের সাথে প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এছাড়া গত ১৩ ডিসেম্বর চুনতি ইউনিয়নের হাজি রাস্তার মাথা এলাকায় পিকনিক বাসের সাথে ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন। গত ২৮ নভেম্বর পদুয়া নয়াপাড়া এলাকায় বাসের ধাক্কায় মো. রাকিব নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। অপরদিকে, গত ১০ নভেম্বর ভোরে হাজি রাস্তার মাথা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে পিকনিক বাসের ১৪ জন আহত হয়েছেন। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় ছোট–বড় প্রায় ২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় শফিকুল ইসলাম হৃদয় জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কে দিন দিন গাড়ির চলাচল বাড়ছে। কিন্তু বড় হয়নি সড়ক। এদিকে গাড়ি চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তো রয়েছে। কে কার আগে যাবে। ফলে পিচ্ছিল সড়কে ওভারটেক করতে গিয়ে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। নতুবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
মোটরসাইকেল আরোহী সেলিম উদ্দিন জানান, প্রতিদিন লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত মহাসড়ক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আবার দিনে সূর্যের আলোতে পিচ্ছিল রাস্তা শুকিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গাছপালার কারণে সূর্যের আলো ভেদ করতে না পারায় পিচ্ছিলই থেকে যায়। তাই মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সামান্য ব্রেক কষলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় রাস্তা এতো পিচ্ছিল থাকে ব্রেক না কষলেও দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া মহাসড়কে গাড়ি চালাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে একাধিক চালক জানিয়েছেন। যার কারণে অনেক সময় গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ লোহাগাড়া শাখার সভাপতি মোহাজিদ হোসাইন সাগর বলেন, মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে, এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকবাহী গাড়ি কক্সবাজার যাওয়া–আসা করছে। সড়ক সম্পর্কে চালকদের ধারণা না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন। তাই লবণবাহী গাড়ি থেকে পানি নিঃসরণ বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত না হওয়া ও অসংখ্য বাঁকও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, নিয়ম না মেনে যেসব লবণবাহী গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করে সেগুলো পাওয়া মাত্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পাশাপাশি গাড়ি চালকদের সকর্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে
অভিযান অব্যাহত রয়েছে।