লঞ্চে ভয়াবহ আগুন, ৩৭ মৃত্যু

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ

ঝালকাঠিতে গভীর রাতে লঞ্চে আগুন লেগে নিহতের সংখ্যা হয়েছে ৩৭ জন; সুগন্ধা নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে পোড়া লাশের গন্ধ। ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে এ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছেন আরও বহু যাত্রী। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। লঞ্চের যাত্রী বরগুনার নারী ও শিশুসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। বরগুনার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে চলছে শোকের মাতম। বন্ধ রয়েছে অনেকের মুঠোফোন। নিখোঁজ যাত্রীদের তথ্য দিতে পারছে না বরগুনা নৌবন্দরও।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের খোঁজ-খবর নিতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি সুলতানা নাদিরা। তাদেরকে ঝালকাঠী ও বরিশালের পাঠানো হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
বরগুনার বিভিন্ন এলাকার নিখোঁজ যাত্রীদের খুঁজতে ঘটনাস্থলে গেছেন স্বজনরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিসহ পোস্ট দিয়ে খোঁজার চেষ্টা করছেন তারা। ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আলম নবীন বিডিনিউজকে জানান, পোড়া ওই লঞ্চ থেকে এ পর্যন্ত ৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ৭২ জনকে আহত ও দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকার সদরঘাটে কর্মরত বিআইডব্লিউটিএ এর পরিবহন পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রায় চারশ যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায়। চাঁদপুর ও বরিশাল টার্মিনালে লঞ্চটি থামে এবং যাত্রী উঠা-নামা করে। তবে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বলেছেন, তিন তলা ওই লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের সময় হাজারখানেক যাত্রী ছিলেন। ঝালকাঠির গাবখানের কাছাকাছি সুগন্ধা নদীতে থাকা অবস্থায় রাত ৩টার পর লঞ্চে আগুন ধরে যায়। পরে ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দিয়াকুল এলাকায় নদীর তীরে লঞ্চটি ভেড়ানো হয়।
প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা ওই লঞ্চ থেকে প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন যাত্রীদের অনেকে। স্থানীয়রা ভিড় করেন নদী তীরে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও সেখানে যান। ট্রলার নিয়ে লঞ্চের আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তারা।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, রাত ৩টা ২৮মিনিটে তাদের কাছে অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। তাদের কর্মীরা ৩টা ৫০ মিনিটে সেখানে পৌঁছে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের চেষ্টায় ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। স্থানীয় বাসিন্দা, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে সহযোগিতা করেন। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম জানান, যেখানে লঞ্চটিতে আগুন লেগেছে, ওই এলাকা ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। লঞ্চের ইঞ্জিনরুমের অংশটি বেশি পুড়েছে। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হাম জালাল বলেন, লঞ্চের কেরানী আনোয়ার ভোর রাত ৩টার ৫মিনিটে তাকে ফোন করে আগুন লাগার খবর দেন। তিনি বলেন, ওই লঞ্চে অন্তত ২১টি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ছিল, কিন্তু এত দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে যে সময় পাওয়া পায়নি।
আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর : ঝালকাঠিতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এবং নিহতদের স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার তার দপ্তর থেকে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকলেও ঝালকাঠির ঘটনার বিষয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
মালদ্বীপ সফররত প্রধানমন্ত্রী নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেছেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেছেন।
নিহতের পরিবার দেড় লাখ টাকা পাবে : এদিকে নিহতদের পরিবারকে সরকার দেড় লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহতদের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা করে সহায়তা দেব আমরা। এছাড়া জেলা প্রশাসন ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।’ ওই অগ্নিকাণ্ডের খবরে সকালেই ঢাকা থেকে ঝালকাঠিতে যান প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ। ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। অভিযান-১০ লঞ্চের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ফিটনেস সার্টিফিকেট থাকার কথা না। এই লঞ্চটির ২০২২ সাল পর্যন্ত ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল।’ ফিটনেস সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
তদন্ত কমিটি গঠন : প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আগুন লেগে পুরো লঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে। এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে এর আগে কখনও ঘটেনি। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একজন যুগ্মসচিবকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বরিশালে চিকিৎসকদল প্রেরণ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শুক্রবার সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি লঞ্চের আগুনে দগ্ধ ব্যক্তিদের দেখতে যান। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও দগ্ধ যাত্রীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পাঁচ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল ঢাকা থেকে জরুরিভিত্তিতে বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন। তবে ওই হাসপাতালের বার্ন ইউনিট বন্ধ থাকায় সেখান থেকে গুরুতর পোড়া রোগীদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
আহতদের মধ্যে ৭০ জনকে এ হাসপাতালে আনা হয় জানিয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে বার্ন ইউনিট বন্ধ। যারা এসেছেন তাদের অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। ৬৭ জনকে সার্জারি ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে র‌্যাবের সহকারী পরিচালক আ না ম ইমরান খান জানিয়েছে, মহাপরিচালকের নির্দেশে তারা লঞ্চের আগুনে সংকটাপন্ন দগ্ধ দুই জনকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধষড়যন্ত্র কাটিয়ে চলতে থাকবে দেশের অগ্রযাত্রা
পরবর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ায় ১৪ মামলায় সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা জরিমানা