ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে অগ্রণী ব্যাংকের দুই লকারে পাওয়া স্বর্ণালংকারগুলোর কিছু তার ব্যক্তিগত, কিছু মেয়ের এবং কিছু তার বোনের নামে ‘চিহ্নিত’ করার তথ্য দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে তার বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে থাকা এ দুই লকার খুলে ৮৩১ দশমিক ৬৭ ভরি (৯৭০৭ দশমিক ১৬ গ্রাম) স্বর্ণালংকার পাওয়ার পরদিন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি অলংকারের আলাদা ‘মার্কিং’ আছে। অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকারের পাশাপাশি গত মঙ্গলবার রাতে পূবালী ব্যাংকে শেখ হাসিনার নামে থাকা আরেকটি লকারও খোলা হয়। সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে খোলা এ লকারে (নম্বর ১২৮) শুধু একটি ‘খালি ছোট পাটের ব্যাগ’ পাওয়া গেছে, বলে জানান দুদকের এ কর্মকর্তা। খবর বিডিনিউজের।
দুদকের অনুসন্ধান দল এগুলো পৃথকভাবে যাচাই করবে তুলে ধরে তিনি বলেন, আদালতে উপস্থাপনের জন্য লকার তিনটি খোলার পর পাওয়া সব মালামালের ইনভেন্টরি প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপকের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে দুদক এ অনুসন্ধান চালাচ্ছে বলে তুলে ধরেন দুদক মহাপরিচালক। গত মঙ্গলবার রাতে অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিলের প্রিন্সিপাল শাখায় সংরক্ষিত শেখ হাসিনার দুটি লকার থেকে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়। আদালতের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেট, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এর উপস্থিতিতে দুদক এসব স্বর্ণালংকার জব্দ করে। গতকাল বিকালে দুদকের মহাপরিচালক আক্তার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের ভিত্তিতে আদালত লকার খোলার অনুমতি দেয়। পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে দুদক। লকারে পাওয়া স্বর্ণালংকারগুলোর কিছু শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত, কিছু তার মেয়ের এবং কিছু তার বোনের নামে চিহ্নিত। প্রতিটি অলংকারে আলাদা মার্কিং আছে। আমাদের অনুসন্ধান দল এগুলো পৃথকভাবে যাচাই করবে। যে অংশ অভিযোগের সঙ্গে সম্পর্কিত, শুধুমাত্র সেটুকুই বর্তমান অনুসন্ধানে বিবেচনায় নেওয়া হবে। অন্য অলংকারগুলো প্রয়োজন হলে পৃথক অনুসন্ধানের আওতায় আসতে পারে।
হাসিনার সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে এ অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দাখিল করা তার সম্পদ বিবরণীতে তিনটি লকারের কথা তুলে ধরেছিলেন। এর মধ্যে পূবালী ব্যাংক পিএলসিতে একটি এবং অগ্রণী ব্যাংক পিএলসিতে দুটি। ওই সম্পদ বিবরণী পুনঃযাচাইয়ের অংশ হিসেবে কমিশনের অনুমোদনক্রমে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা লকার খোলার আবেদন করেন, যা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত গ্রহণ করেন।
দুদক বলছে, আদালতের নির্দেশে একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অনুসন্ধান তদারকি কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুলিয়ন শাখা মনোনীত স্বর্ণ বিশেষজ্ঞ, এনবিআর এর কর গোয়েন্দা ও সিআইসির মনোনীত দুই কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লকার তিনটি খোলা হয়।
দুদক বলছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তিনটি লকার খোলা হয়–পূবালী ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল কর্পোরেট শাখা (গ্রাহক: শেখ হাসিনা, লকার নম্বর: ১২৮), অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, প্রিন্সিপাল শাখা (গ্রাহক: শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, লকার নম্বর: ৭৫১/বড়/১৯৬) এবং অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, প্রিন্সিপাল শাখা (গ্রাহক: শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সিদ্দিকী, লকার নম্বর: ৭৫৩/বড়/২০০)।
দুদক মহাপরিচালক জানান, পূবালী ব্যাংকের লকারে একটি খালি ছোট পাটের ব্যাগ পাওয়া গেছে। অগ্রণী ব্যাংকের একটি লকারে (নম্বর ৭৫১/বড়/১৯৬) প্রায় ৪৯২৩ দশমিক ৬০ গ্রাম স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়। আরেকটিতে (৭৫৩/বড়/২০০) প্রায় ৪৭৮৩ দশমিক ৫৬ গ্রাম স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে।
দুদকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, লকারে সংরক্ষিত চিরকুট ও বর্ণনা দেখে ধারণা করা যাচ্ছে যে স্বর্ণালংকারগুলোর মালিকানা শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পরিবারের সদস্য বোন শেখ রেহানা সিদ্দিকী, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও ভাগ্নে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির।
দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ইনভেন্টরি তালিকা পর্যালোচনা করে প্রতিটি আইটেমের মালিকানা পৃথকীকরণ ও সুনির্দিষ্টকরণ করা হবে। স্বর্ণ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে স্বর্ণের মূল্য নির্ধারণের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মালিকানা ও সম্ভাব্য আইনগত দায় নিরূপণ করা হবে।
এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার দিলকুশায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে লকার দুটি জব্দ করে সিআইসি, যার নম্বর ৭৫১ ও ৭৫৩। তার আগে পূবালী ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় (সেনা কল্যাণ ভবন) শেখ হাসিনার একটি লকার জব্দ করে সিআইসি। ১২৮ নম্বর লকারটি শেখ হাসিনার নামে থাকার তথ্য পেয়ে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল।
নিয়ম অনুযায়ী, একটি লকারের দুটি চাবি থাকে। একটি গ্রাহকের কাছে এবং আরেকটি ব্যাংকের লকার নিরাপত্তা শাখায়। লকার খুলতে হলে দুটি চাবিই লাগে। অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার একটি ব্যাংক হিসাবও গত বছরের অগাস্ট থেকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে। সেই হিসাবে কত টাকা আছে, তাও জেনেছে এনবিআরের দলটি।












