রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে জাতিসংঘকে

| সোমবার , ৩ জুন, ২০২৪ at ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য অংশীদারকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে যখন প্রায় ১০ লাখ মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মানুষ তাদেরকে মমতা দিয়ে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ক্রমেই রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থান করছে, আর ক্যাম্পগুলো মানুষ পাচার, মাদক চোরাচালান, জঙ্গিনিয়োগসহ নানা অপরাধের স্বগর্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠপ্রায়। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রায় ৭৫০ সদস্য বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই ফেরত পাঠানো হয়েছে, বাকিরাও ফেরত প্রক্রিয়ায় আছে। শুধু তাই নয়, মিয়ানমারে বিবদমান গোষ্ঠীর শেল বাংলাদেশ অংশে পড়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এসবের পুনরাবৃত্তি রোধ একান্ত প্রয়োজন।

নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের সভাপতি, মিয়ানমার বিষয়ে মহাসচিবের বিশেষ দূত, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার এবং জাতিসংঘের ৬ উন্নয়ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পৃথক চার বৈঠকে সরকারি দায়িত্বে যুক্তরাষ্ট্র সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সারা বিশ্ব অবগত যে, শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করতে গিয়ে বাংলাদেশ এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এত অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর আগমন তাদের নিরাপত্তা বিধান ও পরিচর্যার জন্য বিশাল ধরনের কর্মযজ্ঞের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ঘনবসতি, সম্পদের স্বল্পতা, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দারিদ্র্যের মাত্রা ও পরিকাঠামোগত স্বল্পতা এবং একই সঙ্গে শরণার্থী মোকাবিলার প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অনুপস্থিতি বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। এসব সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও রাষ্ট্রের উচ্চতম পর্যায় থেকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে বেশ কিছু সেক্টর চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই চাপ মোকাবিলায় দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যার সাড়া ইতিমধ্যে মিলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সুদূরপ্রসারী সমাধানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় যখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে, একই সময়ে ৯১০ লাখ শরণার্থীর জন্য ত্রাণ এবং সুরক্ষা প্রদান করার গুরুদায়িত্ব বাংলাদেশের ওপর বর্তেছে। এই পরিস্থিতিতে এই সম্ভাব্য প্রলম্বিত শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। সে ক্ষেত্রে শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের যথেষ্ট বিচক্ষণতা ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মানবিকতার সঙ্গে প্রয়োজন বিরাজমান বাস্তবতার সঠিক মূল্যায়ন। এ ক্ষেত্রে জরুরি হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আমরা কীভাবে আখ্যায়িত করছি, তা নির্দিষ্ট করা এবং সরকারের উদ্যোগকে যথাযথভাবে প্রতিপূরণ (সাপ্লিমেন্ট) করতে পারে, এমন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া যার শরণার্থী সমস্যা মোকাবিলায় অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এখনো এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

জাতিসংঘ হচ্ছে এমন একটি জায়গা, একমাত্র যে সংগঠন যারা মিয়ানমারকে রাজি করাতে পারে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে। ভাব দেখে মনে হয়, মিয়ানমার কারও কোনও পরোয়া করে না। এখানে বলা বাহুল্য, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক চাপের পরিপ্রেক্ষিতে নানা উদ্যোগ নিয়েও টালবাহানার শেষ নেই মিয়ানমারের। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় তীব্র সমালোচনার মুখে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা উ থুয়াং তুন জানান, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে করা চুক্তি অনুসারে হবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। সেই প্রতিশ্রুতির সাত মাস পরেও এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারের আন্তরিকতার ছিটেফোঁটারও দেখা মেলেনি। বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশের উদ্বেগ, নিন্দা, প্রতিবাদ, অনুরোধ সবকিছুকে থোড়াই কেয়ার করছে মিয়ানমার।

কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে তার একধরনের দায়বদ্ধতা আছে। বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন লেভেলে, এবং এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে জাতিসংঘের মাধ্যমে জিনিসটা সমাধানের চেষ্টা করা। একসাথে এগুলো ডেলিগেটকে পাওয়া এবং তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার খুব বড় একটি সুযোগ।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতেই হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে