রোহিঙ্গারা বললেন তাদের কথা

কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু আজ যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় টেকসই সমাধানের পথ খুঁজতে কক্সবাজারে আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় উখিয়ার ইনানীতে হোটেল বেওয়াচ মিলনায়তনে শুরু হয় এই সম্মেলন। সম্মেলনের প্রথম দিন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শত নারীপুরুষকে আনা হয় সেখানে। আগত অতিথিরা এসব রোহিঙ্গার মতামত শুনেছেন। ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ : টেক অ্যাওয়ে টু দ্য হাইলেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

সম্মেলনের অভ্যন্তরে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশে অনুমতি না থাকলেও দায়িত্বশীল একটি সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওখানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানসহ দেশিবিদেশি অতিথিরা উপস্থিত রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এক প্রেস বার্তায় জানানো হয়, গতকাল বিকালে বিদেশি এবং দেশের উপদেষ্টাদের উপস্থিতিতে ক্যাম্পে প্রতিনিধিত্বকারী একশত রোহিঙ্গা নারীপুরুষ নিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে শোনা হয় তারা আসলে কী চায়। কীভাবে নিজ দেশে ফেরত যাবে। এ আলোচনাটি মূলত তাদের মনোবল বৃদ্ধি করা ও প্রত্যাবাসনে তাদের ভাবনা শোনা হচ্ছে। সেখানে অংশীজনরা কীভাবে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করতে পারেন এটি হচ্ছে প্রথম দিনের আলোচনার বিষয়।

সন্ধ্যায় বিদেশি অতিথিদের জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্যে রোহিঙ্গাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়; যেখানে তাদের ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মিজানুর রহমান জানান, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধান উপদেষ্টা তিন দিনের সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেখানে দেশিবিদেশি অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। বিকালে চারটি বিষয়ভিত্তিক সেশন থাকবে। ওখানে প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশিবিদেশি প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।

তিনি জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার যে সকল অতিথি এখানে আসবেন তাদের ক্যাম্প পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা যেখানে যেখানে যেতে চান সেখানে নেওয়া হবে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের কীভাবে রাখা হয়েছে তা দেখবেন। রোহিঙ্গাদের জন্য যেসব সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। রোহিঙ্গাদের সাথেও আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য এবং রোহিঙ্গাদের চাওয়া একটি, তাদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়া, যাতে কোনো হানাহানি বা কোনো বিপত্তির কারণ না হয়।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতা লাকি করিম, মোহাম্মদ রফিক (খিন মং) ও ওমর সালমা। সৈয়েদুল্লাহ, ফুরকুয়ান মির্জা, আবদুল্লাহ, হুজ্জুত উল্লাহ, সাহাত জিয়া হিরো, আব্দুল আমিন, জয়তুন নারা, জিহিন নূর, আবদুল্লাহ ও রো মুজিফ খান অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। রোহিঙ্গা প্রবাসীরাও অধিবেশনে বক্তব্য দেন। এই অধিবেশনটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের জন্য নির্ধারিত ছিল।

মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত থমাস এইচ অ্যান্ড্রুজ অধিবেশনে যোগ দেন। অন্যদের মধ্যে আবাসিক কূটনৈতিক মিশন, জাতিসংঘ সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গণমাধ্যম, বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অধিবেশনে যোগ দেন।

জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী রানা ফ্লাওয়ার্স, মিয়ানমারের জন্য স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থার প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান এবং ইউএনএইচসিআরের সহকারী হাইকমিশনার রউফ মাজুও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণ অধিকার পরিষদসহ প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও অধিবেশনে যোগ দেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সাইডলাইনে নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ১০৭ দেশের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেই সম্মেলনের প্রস্তুতিস্বরূপ কক্সবাজারের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিংড়ি প্রজেক্ট থেকে তুলে নিয়ে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, বাঁশঝাড়ে মিলল লাশ
পরবর্তী নিবন্ধআইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীর কাছে তথ্য চায় সিএমপি