মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এতদিনেও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও অস্থিরতা তৈরির আশংকা করছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে থেকে বলে আসছিলাম, এদের দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না গেলে এখানে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের হাব তৈরি হতে পারে; অস্ত্রের ঝনঝনানি হতে পারে, অনেক কিছুই হতে পারে। এই হতে পারার মধ্যে কিছু কিছু আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যারা যুদ্ধ করছে তাদের কয়েকজনের আনাগোনা এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হলো, আমাদের দেশ কোনো মাদক উৎপাদন না করলেও মিয়ানমার থেকে মাদক আসছে অনেক আগে থেকে। এখন ক্যাম্পের কিছু লোক মাদকের সাথে জড়িয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে অস্ত্র ও খুনে জড়িতদেরও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য। মিয়ানমারের কথা ও কাজে মিল নেই মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিকসংস্থাসমূহ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে নানা চুক্তি বা সমঝোতা স্বাক্ষর হয়েছে। অথচ ওই দেশের কারণে অগ্রগতি হয়নি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে উখিয়ার ১৯ নম্বর ঘোনার পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এপিবিএন কার্যালয় পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি এপিবিএন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত সভা করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, আজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এপিবিএনের সদস্যদের সাথে আলাপ–আলোচনা করে তাদের চ্যালেঞ্জ সমূহ জেনেছি। তাদের সুবিধা–অসুবিধা সমূহও জেনেছি। তাদের বলেছি, জঙ্গি–সন্ত্রাস দমনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইন–শৃক্সখলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায়’ প্রধান অতিথি ছিলেন। এসময় তিনি মিয়ানমারের কোনো নাগরিককে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না জানিয়ে বলেন, আমরা মিয়ানমার থেকে কোনো মানুষ, সে রোহিঙ্গা হোক আর অন্য কেউ হোক কাউকেই আর আসতে দেবো না। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। এ কারণে ক্যাম্পে খুনখারাবি হচ্ছে। এসব বন্ধে বিজিবি, এপিবিএন এবং সেনাবাহিনীও কাজ করছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃক্সখলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আরকান আর্মি এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি ছাড়াও আরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল যুদ্ধ করছে। এ কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই ক্যাম্পে খুনখারাবি ও রক্তপাত বন্ধ হোক। সেজন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের কাঁটাতার দিয়ে যেন কোনো রোহিঙ্গা বের হতে না পারে সেই জন্য নষ্ট হয়ে যাওয়া কাঁটাতারগুলো সংস্কার করা হবে, যাতে রোহিঙ্গারা প্রয়োজন ছাড়া বের হতে না পারে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কক্সবাজার–৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী–কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আনোয়ার হোসেনসহ আইনশৃক্সখলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।