রোবট করবে জিনস সেলাই এশিয়ার সামনে শঙ্কা

| বুধবার , ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন ও বাংলাদেশ কীভাবে শীর্ষ দুটি স্থান দখল করে আছে? কারণ এশিয়ার এসব দেশে শ্রম তুলনামূলকভাবে অনেক সস্তা। সেই বাস্তবতা বদলে দিতে পোশাক শিল্পে রোবটিক্স প্রযুক্তি যোগ করার কাজে জোট বেঁধেছে জার্মানির প্রযুক্তি কোম্পানি সিমেন্স এজি এবং মার্কিন ডেনিম কোম্পানি লেভি স্ত্রস।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পোশাক সেলাইয়ের জন্য বাংলাদেশ বা চীনের মত দেশের শ্রমিকদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বাজারে ফেরাতে চাইছে কোম্পানিগুলো। স্যান ফ্রান্সিসকোর সিমেন্স ল্যাবের প্রকল্প প্রধান ইউজেন সোলোজাওয়ে বলেন, পোশাক হচ্ছে সেই লাখ কোটি ডলারের শিল্পখাত, যা এখনও অটোমেটেড হয়নি। খবর বিডিনিউজের।

পোশাক উৎপাদন প্রক্রিয়ার রোবট ব্যবহারের এই প্রযুক্তি নিয়ে ২০১৮ সাল থেকেই গবেষণা করছে সিমেন্সের ওই ল্যাবরেটরি। তবে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের ভূখণ্ডে রোবট দিয়ে কাপড় সেলাই করার এ ধারণা পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর কাছে আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে মহামারীর কারণে। পশ্চিমা কোম্পানিগুলো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিজেদের ভূখণ্ডে ফেরানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে মনোযোগী হলেও বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ্যে এ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করছে না।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উৎপাদনমুখী শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন- যৌক্তিকভাবেই এমন আশঙ্কা বাড়বে তখন। জিনস সেলাই কারখানার কিছু কাজে অটোমেশন ও রোবটিক্স প্রযুক্তি প্রয়োগের কৌশল তৈরি করে ইতোমধ্যে অনলাইনে সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন উদ্ভাবক জনাথান জোর্নোউ; এমনকি মৃত্যু হুমকিও তিনি পেয়েছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, রোবট ব্যবহারের পরীক্ষামূলক এক প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি লিভাইসের মুখপাত্র।

রোবটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ : পোশাক সেলাইয়ে রোবট ব্যবহারের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতাগুলোর একটি হচ্ছে কাপড়ের নমনীয়তা, পুরুত্ব আর বুনন। একজন মানুষ নিজের স্পর্শ দিয়ে যেভাবে কাপড়ের অনুভূতি নিতে পারেন, রোবটের সে ক্ষমতা নেই। গবেষকরা বলছেন, রোবটিক্স প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি হলেও পোশাক সেলাইয়ের কাজ করার ক্ষেত্রে একজন মানব শ্রমিকের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে রোবটগুলোকে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি যদি রোবট ব্যবহার করে তাদের পোশাক উৎপাদনের খরচ উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমপর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারে, পরিস্থিতি তখন কেমন দাঁড়াবে, সেই প্রশ্ন সামনে এনেছে রয়টার্স।

সিমেন্সে উপলব্ধি করে, পোশাক শিল্পই এই উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় বাজার। পরিসংখ্যানের ওয়েবসাইট স্ট্যাটিসটার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের পোশাক বাজারের আকার এখন ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি ডলার। রোবটের জন্য কাপড়ের নমনীয়তা নিয়ে জটিলতার সমাধান করতে একটি স্টার্টআপ কোম্পানিকেও চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রোবটকে ভিন্ন ভিন্ন বুননের কাপড় নাড়াচাড়া করা শেখানোর বদলে রাসায়নিক প্রয়োগ করে পোশাকের কাপড়কে শক্ত করে তোলার প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছে ‘সিউবো ইনকর্পোরেটেড’ নামের ওই স্টার্টআপ কোম্পানি। এতে কারখানায় উৎপাদিত গাড়ির বাম্পারের মতই সহজে পোশাকের কাপড় নিয়ে কাজ করতে পারবে রোবট। সেলাই শেষে ধুয়ে ফেললেই চলে যাবে সেই রাসায়নিক।

নতুন প্রযুক্তিতে আগ্রহ বাড়ছে : পোশাক শিল্পে রোবট ব্যবহারের বিষয়ে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। এ তালিকায় লিভাইস ছাড়াও আছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য ইউনিফর্ম উৎপাদক ব্লুওয়াটার ডিফেন্স এলএলসি। জর্জিয়ার ‘সফটওয়্যার অটোমেশন ইনকর্পোরেটেড’ নামে এক স্টার্টআপ কোম্পানি এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছে যা বিশেষ টেবিলের ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে টি-শার্ট সেলাই করতে পারে।

ব্লুওয়াটার ডিফেন্সের প্রধান নির্বাহী এরিক স্পেকি অবশ্য সিউবোর প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী নন। সিমেন্সের সঙ্গে গবেষণা প্রকল্পে অংশ নিয়েছিল তার কোম্পানি। স্পেকের মতে, কাপড়কে আরও শক্ত করার জন্য রাসায়নিক প্রয়োগ পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাড়তি একটি স্তর যোগ করবে, যাতে উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে।

তবে জিনস উৎপাদকরা যেহেতু এমনিতেই তাদের পোশাক ধুয়ে বাজারজাত করেন, এ প্রযুক্তি তাদের কাজে আসতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্পেকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএম কন্টেনার ডিপোতে ফের আগুন, পুড়ল পাট
পরবর্তী নিবন্ধফয়সালা রাজপথেই