ঈদকে সামনে রেখে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। নানা কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে চাপে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। প্রবাসীদের প্রচুর রেমিটেন্স স্বজনদের হাতে পৌঁছে গেছে। পাইপলাইনেও প্রচুর রেমিটেন্স রয়েছে। আত্মীয়–স্বজনদের খরচের জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ বাজারে ঘুরতে শুরু করেছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। রমজানের প্রথম দশ দিন শেষ হয়েছে। রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। মফস্বল থেকে থানা সদর পর্যন্ত সর্বত্র ইফতার ও সেহরির বাজার, ঈদের জামা থেকে শুরু করে জুতো পর্যন্ত নানা পণ্যের জমজমাট ব্যবসা চলছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে অনেকটা থমকে থাকা গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব পরিলক্ষিত হতে শুরু করেছে। থানা সদর এবং গ্রামের বাজারগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি এবং দোকানে দোকানে বেচাবিক্রি বেড়েছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাজারগুলো সরগরম থাকছে। কেউ কেউ ইফতারের আগে ঈদ শপিং সেরে ঘরে ফিরলেও কেউ কেউ তারাবির নামাজ পড়ে বের হন। ফিরেন সেহরির সময়। এতে করে সকাল থেকে সেহরি পর্যন্ত ২০ ঘণ্টার বেশি সময় দোকানপাট খোলা থাকছে, চলছে ব্যবসা। প্রচুর ক্রেতা বাজারে যাওয়া–আসায় ব্যবহার করছেন নানা পরিবহন; যা পরিবহন খাতে গতি এনেছে। ইফতার সামগ্রী, ঈদ সামগ্রী, কাপড় চোপড়সহ উপহার সামগ্রী বিক্রি এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে পরিবহন। বেড়েছে জ্বালানির ব্যবহার। সবকিছু মিলে বাজারে টাকার যোগান বেড়েছে। প্রচুর টাকা হাতবদল হচ্ছে। এটা গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি এনেছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটা কৃষি, চাকরি এবং রেমিটেন্স নির্ভর। আর উপরোক্ত প্রত্যেকটি খাতে ঈদের সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। যারা চাকরি করছেন তারা ঈদ বোনাস পাবেন। কৃষিতে শাকসবজির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের ফলন ফলেছে। যা বিক্রি করে কৃষকের হাতে টাকা আসছে। যে টাকা হাত ঘুরে রোজা এবং ঈদের বাজারে খরচ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক হচ্ছে রেমিটেন্স। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমানে ৫০ লাখ ৫৩ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক বৈধভাবে বসবাস করেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের নাগরিকের সংখ্যা ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন বলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক তথ্যে জানা গেছে। দেশের প্রবাসী পরিবারের অন্তত ৩৫ শতাংশের বসবাস চট্টগ্রাম বিভাগে। যাদের কাছে প্রবাসীরা নিয়মিত টাকা পাঠান। ঈদকে সামনে রেখে টাকা পাঠানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন। তারা বলেন, প্রবাসীরা প্রচুর টাকা পাঠাচ্ছেন। এখান পরিবার পরিজন তা তুলে কেনাকাটা করছেন। যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। গত বছর ঈদ–রোজায় দেশে ২৬ হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছিল। এবার এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশা করছেন রেমিটেন্স গ্রহণকারী ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে, যা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতি ভালো নেই। বিভিন্ন ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনীতি ভালো না থাকলে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী ভালো থাকে না। সাধারণ মানুষের হাতে টাকার যোগান কমে আসছে। মূল্যস্ফীতিতে কাহিল সাধারণ মানুষ। জিনিসপত্রের দাম অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির যে প্রবাহ শুরু হয়েছে তা শুধু গ্রামীণ অর্থনীতি নয়, দেশের অর্থনীতির সার্বিক গতিশীলতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চলতি রোজা এবং ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে একাধিক ব্যাংকার জানিয়েছেন, এর একটি বড় অংশ খরচ হবে গ্রামে। রোজা এবং ঈদে চট্টগ্রাম বিভাগে অন্তত ২ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স আসবে বলে তারা ধারণা করছেন। এই ২ হাজার কোটি টাকাই মূলত চট্টগ্রামের গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্বস্তিতে রাখবে বলে মন্তব্য করেন তারা।