সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের খাবার (পথ্য) বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকায় উন্নীত করে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ১০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারিকৃত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জারির তারিখ (১০ অক্টোবর) থেকেই বরাদ্দ বৃদ্ধির এ আদেশ কার্যকরের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৬ অধিশাখার উপসচিব মোহাম্মদ শওকত উল্লাহ’র স্বাক্ষরে জারিকৃত এক আদেশে এ সম্মতির তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনের স্বাক্ষরে মঞ্জুরি জ্ঞাপন সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ তারিখে প্রদত্ত সম্মতির প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত দেশের সকল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের (নন-কোভিড) খাবার সরবরাহের নিমিত্ত পথ্য বরাদ্দ বাবদ রোগী প্রতি দৈনিক ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হল। যদিও এ বিষয়ে আবশ্যিক সকল বিধি-বিধান ও আর্থিক নিয়মাবলী যথাযথ ভাবে পালন করতে হবে মর্মে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। আদেশে আরো বলা হয়- সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দকৃত বাজেট হতে এ ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
পত্র জারির তারিখ (১০ অক্টোবর) থেকে এ আদেশ কার্যকর হবে। এর মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে রোগী প্রতি খাবার বাবদ দৈনিক বরাদ্দ ৫০ টাকা বাড়ল। এরইমধ্যে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে।
প্রসঙ্গত, হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে (ইনডোরে) ভর্তি থাকা প্রত্যেক রোগীকে সকালে ও বিকেলে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালগুলোতে একজন রোগীর খাবার বাবদ (নাস্তা ও দুই বেলা খাবার) দৈনিক বরাদ্দ ছিল ৭৫ টাকা। ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ৭৫ টাকা থেকে রোগী প্রতি বরাদ্দ ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হিসেবে ওই সময় মাথাপিঁছু বরাদ্দ ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৩ সালের পর প্রায় দশ বছরের মাথায় এবারও রোগী প্রতি বরাদ্দ ফের ৫০ টাকা বাড়ানো হল। যদিও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালসহ দেশের একাধিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে রোগী প্রতি দৈনিক এ বরাদ্দ ৩০০ টাকা করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়। হাসপাতালগুলোর প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে দৈনিক এ বরাদ্দ ২৫০ টাকা নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে রোগী প্রতি দৈনিক বরাদ্দ ১৭৫ টাকায় উন্নীতকরণে সম্মতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের সম্মতির পর সর্বশেষ ধাপে গত ১০ অক্টোবর সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন সংক্রান্ত আদেশ (জিও) করল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে দৈনিক আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। ভর্তি থাকা রোগীদের ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে পথ্য (সকালে ও বিকেলে নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার) সরবরাহের দায়িত্ব পায় ৬টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমপ্রতি বাজারে খাদ্য-পণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পথ্য সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করে একযোগে চিঠি দেয়। এতে করে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের খাবার সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। গত ১৬ আগস্ট চমেক হাসপাতাল পরিচালক বরাবর একজোটে চিঠি দিয়ে খাদ্য-পণ্য সরবরাহে অপারগতা জানায় এ চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চিঠিতে বাজারে খাদ্য-পণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ অপারগতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সংক্রান্ত চিঠি গত ১৭ আগস্ট হাতে পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও কার্যাদেশ প্রদানকালীন চুক্তি মোতাবেক সরবরাহ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই মর্মে ২৩ আগস্ট ফিরতি চিঠিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়ে দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে গত ২৭ আগস্ট দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘চমেক হাসপাতাল : আড়াই হাজার রোগীর খাবার সরবরাহে অনিশ্চয়তা/খ্যাদ্য-পন্যের উচ্চ মূল্য-একজোটে অপারগতা চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।










