চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামবাসীর জন্য আশীর্বাদ বলে মন্তব্য করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক এম এ মালেক বলেছেন, চট্টগ্রামের মানুষের দান–অনুদানে গড়ে ওঠা হাসপাতালটি বৃহত্তর চট্টগ্রামের ক্যান্সার রোগীদের ভরসার জায়গা হয়ে উঠছে। বছর দুয়েক আগে টাকা দিয়েও ক্যান্সারের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সম্ভব ছিল না চট্টগ্রামে। এখন তুলনামূলক স্বল্প খরচে এই সেন্টারে ক্যান্সারের রেডিওথেরাপিসহ পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার দুপুরে লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং মেট্রোপলিটনের পক্ষ থেকে ক্যান্সার হাসপাতালের দুস্থ রোগীদের সহায়তায় গঠিত জাকাত ফান্ডে অর্থ প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান এম এ মালেক বলেন, এই ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সকলের অবদান রয়েছে। আমরা কারো এক টাকা অনুদানকেও ছোট করে দেখিনি। প্রত্যেকেই তাদের অবস্থান থেকে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। সবার দেওয়া সহায়তায় আজ এই হাসপাতাল পূর্ণতা পেয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে, একটি মেশিন দিয়ে চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দ্বিতীয় ক্যান্সার মেশিন ক্রয়ের জন্য অন্তত ৫০ কোটি টাকা দরকার। এই টাকাও চট্টগ্রামের মানুষের দান–অনুদানে সংগৃহীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন আজ যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সমাজের সকল বিত্তবান মানুষ যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসেন তাহলে দ্বিতীয় মেশিন স্থাপন আটকে থাকবে না। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসায় লায়ন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এটাই লায়নিজম। সাবেক জেলা গভর্নর এম এ মালেক ৬৪ বছর ধরে লায়নিজমে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন।
হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন লায়ন্স জেলা গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রথম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান রানা, লায়ন্স ক্লাব অব মেট্রোপলিটনের প্রেসিডেন্ট লায়ন মিজানুর রহমান রুবেল প্রমুখ।
জেলা গভর্নর লায়ন কোহিনুর কামাল বলেন, লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং মেট্রোপলিটন সেবার জগতে আজ যে অনন্য ভূমিকা রাখল তা প্রতিটি ক্লাব অনুসরণ করলে মানুষ অনেক বেশি উপকৃত হবে। তিনি বলেন, লায়নিজম কেবল একটি সংগঠনের নাম নয়, এটি একটি মানবিক আদর্শ, যা সেবার মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার প্রত্যয় বহন করে। দৃষ্টি হারানো মানুষের চোখে আলো ফেরানো, অভুক্তের মুখে খাবার তুলে দেওয়া, দুর্বলকে শক্তি দেওয়া–এসবই লায়নিজমের মূল চেতনা। আমি বিশ্বাস করি, ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের জন্যও আমাদের অনেক কিছু করার রয়েছে। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লায়ন ও লিও সদস্যদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
লায়ন্স ক্লাব চিটাগাং মেট্রোপলিটনের পক্ষ থেকে জাকাত ফান্ডে ২ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেডকোয়ার্টার লায়ন জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী, রিজিয়ন চেয়ারপার্সন ও দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার লায়ন হাসান আকবর, রিজিয়ন চেয়ারপার্সন লায়ন মোর্শেদুল হক চৌধুরী, ক্লাব ট্রেজারার লায়ন রফিকুল হাসান মানিক, লায়ন খালেদ রিসাদ, হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মো. জাহিদুল হাসান, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, সদস্য মো. সাইফুল আলম, মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার বড়ুয়া, পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. নূরুল হক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর জালাল উদ্দিন, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সঞ্জয় কান্তি বিশ্বাস, এনাটমি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আসমা মোস্তফা, ফার্মাকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর রোজিনা হক, উপ–পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট রনজু কনা পাল প্রমুখ।