দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের পর সংক্রমণ ঠেকাতে আবার কিছু বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সরকার।
এই বিধি-নিষেধে বাস-ট্রেন আবার চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। বন্ধ থাকবে উন্মুক্ত স্থানে যেকোনো সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান কিংবা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ।
১১টি ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে আজ সোমবার (১০ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা আগামী ১৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আজ সোমবারের নির্দেশনায় রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে কোভিড টিকা সনদ থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। টিকা সনদ ছাড়া ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পারবে না বলেও জানানো হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই বন্ধ হচ্ছে না বলে জানানো হয়েছে আগেই। তবে একেক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা একেক দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি ক্লাসে যাবে। আর অনলাইন ক্লাস চলবে।
বাস, ট্রেনের মতো লঞ্চেও সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চালাতে বলা হয়েছে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে টিকার সনদধারী হতে হবে।
অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এই নিয়ম না মানলে শাস্তির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু হলে মার্চে দেশজুড়ে লকডাউন জারি করা হয় যা দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলে।
আজ সোমবার দেশে এক দিনে শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে ২২শ ছাড়িয়ে গেছে, সেই সঙ্গে দৈনিক শনাক্তের হার ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে ৮ শতাংশ।
দৈনিক শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে বলে মনে করা হয়।
পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাওয়ায় গত ৩ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভা শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানায় ফের কড়াকড়ি আরোপের দিকে যাচ্ছে সরকার।
সেই বৈঠকের পর ৪ জানুয়ারি ১৫ দফা নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যেখানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগমে নিরুৎসাহিত করা হয়।
যেসব বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে
- দোকানপাট,শপিংমল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তো্রাঁসহ সব জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
- অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নিয়ম না মানলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে।
- রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সনদ দেখাতে হবে।
- ১২ বছরের বেশি বয়সের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে টিকা সনদ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
- স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বন্দরে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোয় আসা ট্রাকের সাথে শুধুমাত্র চালক থাকতে পারবে, কোনো সহকারী আসতে পারবে না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশ বন্ধ করতে হবে।
- ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের বাধ্যতামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকার সনদধারী হতে হবে।
- বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯ টিকাকার্ড প্রদর্শন এবং র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে।
- স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজের খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
- সর্বসাধারণের করোনাভাইরাসের টিকা এবং বুস্টার ডোজ গ্রহণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় প্রচার এবং উদ্যোগ নেবে। এক্ষেত্রে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিবে।
- কোভিড আক্রান্তর হার ক্রমবর্ধমান হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে।
- কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে।