ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে রেল মন্ত্রণালয়। টিকিট কালোবাজারি রোধে আরও একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে যাচ্ছে রেলওয়ে। একই সাথে রেলের জমি নিয়ে নয়–ছয় বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে রেলওয়ের উর্ধ্বতনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। রেলের জমি কার কার হাতে আছে সেটার তালিকা জরুরি ভিত্তিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেলের জমির যথাযথ ব্যবহার এবং রেলের জমি যাতে অবৈধ দখলদারের হাতে না যায় বিষয়টি কঠোর ভাবে মনিটরিংয়ের জন্য রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। গত সোমবার রেল ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এসব কথা বলেন।
রেলের টিকিট কালোবাজারি: রেলের টিকিট কালোবাজারি রোধে রেল কর্তৃপক্ষ যত উদ্যোগই নিয়েছে–শস্যের মধ্যে ভুত থাকায় (রেলের নিজেদের লোক জড়িত থাকায়) কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। ম্যানুয়ালি যখন শতভাগ টিকিট কাউন্টারে দেয়া হতো তখন যাত্রীরা টিকিটের জন্য কাউন্টারে যাওয়ার আগেই কালোবাজারিরা প্রায় টিকিট কেটে নিত। এতে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জড়িত থাকতো। অনলাইনের এই সময়েও রেলের টিকিট কালোবাজারিতে রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা জড়িত বলে বলে অভিযোগ রয়েছে। রেলের টিকিট সিস্টেম অনলাইন হওয়ার পরও কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমেনি। বলতে গেলে টিকিট কালোবাজারি রোধে রেলওয়ের সব উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছে। রেলের অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের সাথে যারা জড়িত বিভিন্ন সময়ে টিকিট কালোবাজারিদের সাথে তাদের কেউ কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেরিয়ে এসেছে।
গত ১৯ আগস্ট রেল ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিভিন্ন প্রশ্নের জাবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি রেলওয়েতে কয়েকজন লোক আছে, তারা ফোন নম্বর দিয়ে আলাদাভাবে টিকিট দেন। সাধারণ মানুষ কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পায় না। আমরা বলে দিয়েছি, এ বিষয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠন করতে। ওই ফোন নম্বরগুলো যেন ব্লক করে দেওয়া হয়। তারা যেন আর কখনও কোনও টিকিট কিনতে না পারেন। যে আইডি ও মোবাইল নম্বর দিয়ে টিকিট কাটা হয়েছে এবং যিনি ট্রেনে ভ্রমণ করছেন তার সঙ্গে মিলছে কিনা সেটাও দেখতে বলা হয়েছে।’ ‘ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা নিয়ে আরও একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, কিছু কারিগরি সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এটা দূর করতে হবে। রেলের জমি নিয়ে নয়–ছয় বন্ধ করতে হবে। রেলের জমি কার কার হাতে আছে সেটা দেখা জরুরি। আশা করি, এসব বিষয় আমার কাছে পাঠানো হবে। আমরা এটা কঠোরভাবে মনিটরিং করবো।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মোট জমির পরিমান: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমান ২৪ হাজার ৪শ’ একর। এরমধ্যে বিভিন্ন প্রভাবশালীদের দখলে আছে প্রায় ৪৮২ দশমিক ৫ একর জমি।
রেলওয়ে ভূ–সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ, সিলেট বিভাগ, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা বিভাগ (ফরিদপুর জেলা বাদে)। এই বৃহৎ অঞ্চলজুড়ে বেদখলে থাকা ৪৮২ দশমিক ৫ একর জমির মধ্যে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান–স্থাপনা এবং প্রভাবশালীদের বস্তি, মার্কেট রয়েছে। এই ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমান ২৪ হাজার ৪শ’ একর। এরমধ্যে কিছু লিজ দেয়া হয়েছে। কিছু অবৈধ দখলও আছে। অনেকেই বস্তি করে বসবাস করছেন। অনেকেই মসজিদ–মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। ভাসমান দোকানও আছে। আমরা অনেক সময় উচ্ছেদ করি। আবার অবৈধ দখলদাররা রাতের আধারে বস্তি করে ফেলে। ২৪ হাজার ৪শ’ একরের মধ্যে জলাশয় আছে, কৃষি জমিও আছে। রেলওয়ে কিছু জমি লিজও দিয়েছে।