রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় বাড়াতে হবে

| শনিবার , ২ মার্চ, ২০২৪ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

আমদানিতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক মাসের ব্যবধানে ৬৩ কোটি ডলার বেড়েছে। এটা নিশ্চয় সুখকর সংবাদ। ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে নিট রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৯৯৪ কোটি ডলার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫৭ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহও কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া নতুন করে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার কারণেও ডলারের প্রবাহ কিছুটা বেড়ে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারির শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ৫০৯ কোটি ডলার। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৭৭ কোটি ডলারে। আলোচ্য সময়ে রিজার্ভ বেড়েছে ৬৮ কোটি ডলার। তবে ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে এ মাসে বড় অঙ্কের কোনো বৈদেশিক দেনা শোধ করতে হয়নি। চলতি মার্চের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। ফলে রিজার্ভ আবার ১৯ বিলিয়ন (১০০ কোটিকে এক বিলিয়ন) ডলারের ঘরে নেমে আসবে। প্রতি দুই মাস পরপর আকুর দেনা শোধ করতে হয়।

এবার গত জানুয়ারি ফেব্রুয়ারির দেনা শোধ করতে হবে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন রিজার্ভ বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকার বিনিময়ে সাময়িক সময়ের জন্য ডলার ধার করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমেও রিজার্ভ বাড়ানো হচ্ছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারির তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময় পর্যন্ত রপ্তানি আয় বেড়েছে আড়াই শতাংশ, রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর বিপরীতে আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ শতাংশ। একই সঙ্গে নতুন এলসি খোলার হার কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেছে, আয় বেড়েছে। এর প্রভাবে রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। এদিকে বৈদেশিক ঋণ বা অন্যান্য দেনা পরিশোধের মেয়াদ আরও কিছুটা সময় বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন ঋণ পরিশোধের চাপ কিছুটা কম। মেয়াদ শেষ হলে আবার ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। এদিকে জ্বালানি তেল আমদানিতে সরকার বিদেশ থেকে চড়া সুদে স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে।

পত্রিকান্তরে আরো জানা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনে ডিসেম্বরভিত্তিক আইএমএফের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। সে অনুযায়ী এ চেষ্টা অব্যাহত ছিল। তবে ৩১ ডিসেম্বর দিনশেষে নিট রিজার্ভ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার কিছুটা কম। আইএমএফের শর্ত ছিল, ডিসেম্বর শেষে কমপক্ষে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নিট রিজার্ভ থাকতে হবে। কিন্তু ডিসেম্বরের দিনশেষে ছিল ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮০ মিলিয়ন বা ৫৮ কোটি ডলার কম রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক মুখপাত্র বলেন, আইএমএফ একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। পুরোপুরি অর্জন করতে না পারলেও কাছাকাছি পৌঁছানো গেছে। তারা আশা করছেন, সংস্থাটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য পিছিয়ে থাকাকে ‘অর্জন হয়নি’ বিবেচনা করবে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইএমএফের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রিজার্ভ রাখার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ৬০ কোটি ডলারের মতো কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে ১০৪ কোটি ডলার। এসবের পাশাপাশি ডিসেম্বরে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৯ কোটি এবং এডিবির ৪০ কোটি ডলারসহ আরও কিছু ঋণের অর্থ যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে মাসের শেষ ১৫ দিনে রিজার্ভ আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি বেড়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর দিনের শুরুতে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

গত জুনেও নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও সমপ্রতি আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। গত জুনে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল অন্তত ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক রাখতে পেরেছিল ১৯ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ গত বছরের জানুয়ারিতে যখন ঋণের প্রথম কিস্তি দেয়, তখন ডিসেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ রাখার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি থাকায় এবং জরুরি আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির প্রয়োজন থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে আইএমএফ তা সংশোধন করে।

একসময় বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের মতো করে রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করত। তবে এখন আইএমএফ বিপিএম ৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী হিসাব প্রকাশ করছে। সে অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর গ্রস বা মোট রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এখান থেকে আগামী এক বছরের দায় বাদ নিট রিজার্ভ হয়েছে ১৭ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ উঠেছিল ২০২১ সালের আগস্টে। তখন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। তবে করোনাপরবর্তী চাহিদা এবং রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো। আর ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ২৮ বিলিয়ন ডলারের মতো। ডলারের দরও অনেক বেড়েছে। ওই সময়ে প্রতি ডলার ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। এখন আনুষ্ঠানিক দর ১১০ টাকা। যদিও ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২৪ টাকায় রেমিট্যান্স কিনছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, যেভাবেই হোক রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এজন্য উপায় একটাইতা হলো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রফতানি আয় বাড়াতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে