চট্টগ্রাম বিভাগের রেমিটেন্সযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানাতে হয়। তাঁরা বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা পাঠান। গত ৭ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০ লাখের বেশি প্রবাসী কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগেই সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্সযোদ্ধা আছেন। বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার যোগান দেন চট্টগ্রাম বিভাগের রেমিটেন্সযোদ্ধারা। তবে এই বিভাগে রেমিটেন্সযোদ্ধা বেশি থাকলেও বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর পরিবর্তে হুন্ডির ব্যবহার বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানো একটি বিপজ্জনক ধারা। বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ানো গেলে দেশের অর্থনীতির শঙ্কা কেটে যাবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগের ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৫২ জন রেমিটেন্সযোদ্ধা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। এই সংখ্যা দেশের মধ্যে সর্বাধিক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। চট্টগ্রাম থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ কমে ঢাকা বিভাগের রেমিটেন্সযোদ্ধা রয়েছেন ১৪ লাখ ৩১ হাজার জন। ইংল্যান্ডে বিপুল সংখ্যক সিলেটের মানুষের বসবাস হলেও তৃতীয় স্থানে থাকা সিলেট বিভাগের প্রবাসীর সংখ্যা ৫ লাখ ৭৩ হাজার জন। বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, দেশের মোট রেমিটেন্সভোগী পরিবারগুলোর মধ্যে সর্বাধিক রয়েছে চট্টগ্রামে, ৩৫.২ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে ৩০.৫ শতাংশ এবং সিলেটে ১০.১ শতাংশ। রেমিট্যান্স গ্রহণকারী পরিবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সংখ্যা হচ্ছে রংপুর বিভাগের, মাত্র ২.৪ শতাংশ।
শুধু অর্থনীতিবিদরা নন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা–সংগ্রামে বিশ্ব জনমত সৃষ্টিতে প্রবাসীরা বড় ধরনের অবদান রাখেন। সব আন্দোলন–সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের বড় অবদান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীরা আমাদের স্বাধীনতা–সংগ্রামে, যেকোনো আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। যখন বাংলাদেশে মার্শাল ল’ জারি হয়, আমরা যখন কাজ করতে পারি না, তখন প্রবাসীরা প্রতিবাদ জানান। আপনারা আন্দোলন–সংগ্রাম করেন। জনমত সৃষ্টি করেন। এটা আমাদের জন্য বিরাট শক্তি।’
প্রবাসীদের আয় দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ডলার সংকটের এ সময়ে সেই গুরুত্ব আরো বেড়েছে। তাই সরকার প্রবাস আয় বাড়াতে প্রণোদনার পাশাপাশি নানা সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তার ইতিবাচক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে।
এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিশাল ভূমিকা আছে। এরপরও তাঁরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাঁদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ব্যবস্থাপনা ও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ ব্যবহার নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা দরকার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বৈধপথে প্রবাসী আয় বাড়ানো ছাড়া বর্তমানের অর্থনৈতিক সংকট সমাধান হবে না। হুন্ডিতে টাকা পাঠালে শাস্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে হবে, যা বৈধপথ বেছে নিতে উৎসাহ দেবে। রেমিট্যান্সে প্রণোদনা বাড়ানোর পক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। সুতরাং প্রণোদনার পেছনে বছরে ৫ হাজার কোটি ব্যয় হলে তেমন কিছু যায় আসে না। সুফল পেতে বাড়ি বাড়ি রেমিট্যান্সের টাকা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, দেশের বৃহত্তর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই হয়। এই রেমিট্যান্স প্রবাহের দিকে লক্ষ্য রেখেই পদ্মা সেতু করতে আমরা সাহস পেয়েছি। আরো বড় বড় মেগা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পথে। রেমিট্যান্স এখন আমাদের দাঁড়ানোর শক্তি ও নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তাছাড়া বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
বিদেশে জনশক্তি পাঠানো এবং প্রবাসীদের সমস্যা–সম্ভাবনা দেখভাল করার জন্য জনশক্তি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। বিশ্বের কোন কোন দেশের কোন কোন সেক্টরে কখন কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে বা থাকে, তার আপ টু ডেট খবর নিতে হবে এবং তা জনগণকে জানাতে হবে। সেখানে বাংলাদেশীদের চাকরি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ সরকারি উদ্যোগে করা দরকার। এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লোকজনকে দক্ষ করার জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।