রেমালে বাড়ল ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | মঙ্গলবার , ৪ জুন, ২০২৪ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর উপরে উঠে এলো কক্সবাজার শহরসহ জেলার উপকূলীয় এলাকার ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের স্তর। সেই সাথে গত মার্চ মাস থেকে তীব্র খরায় অচল হয়ে পড়া হাজার হাজার অগভীর নলকূপও সচল হয়ে উঠেছে। গত ২৮ মে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ২ দিন পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে কক্সবাজারের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে কক্সবাজারের অধিকাংশ মানুষের জন্য।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত ২৬ ও ২৭ মে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। উপরন্তু গত মার্চ মাস থেকে তীব্র খরায় দ্রুত নেমে যাওয়া পানির স্তরও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। খরায় অচল হয়ে পড়া হাজার হাজার অগভীর নলকূপ সচল হয়ে ওঠেছে।

কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম জানান, মাত্র তিন দশক আগেও কক্সবাজার শহরসহ জেলাজুড়ে মাত্র ১০ থেকে ২৫ ফুট গভীরে নলকূপ বসিয়েই সারা বছর সুপেয় মিষ্টি পানি পাওয়া যেত। এমনকি কিছু কিছু এলাকায় অগভীর নলকূপ থেকেই ঝর্ণার মতো অনবরত পানি বের হতো। সেই পানির স্তর ধীরে ধীরে কমতে কমতে এখন তা হাজার ফুটে গিয়ে ঠেকেছে।

তিনি জানান, তিন বছর আগে কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোডে ৩৮০ ফুট গভীরতায় নলকূপ বসিয়ে তিনি মিষ্টি পানি পেয়েছেন। কিন্তু গত বছর থেকে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে সেই নলকূপের পানি আর পান করতে পারছেন না। পরে তিনি ৪৬০ ফুট গভীরতায় নলকূপ বসিয়ে মিষ্টি পানি তুলছেন।

কক্সবাজার শহরতলীর সমুদ্র তীরবর্তী পাহাড়ের পাদদেশ দরিয়ানগরের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক ডা. শ্যামল কান্তি দাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেন আশীর্বাদ হয়ে ওঠেছে কক্সবাজারের অধিকাংশ মানুষের জন্য। ঘূর্ণিঝড়ের ২ দিন পর থেকে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে কক্সবাজারের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। তিনি বলেন, আমি ৪০ ফুট গভীরতায় নলকূপ বসিয়ে পানি পাই। আমার বাড়ি খালের পাড়ে হওয়ার পরও মার্চ মাস থেকে নলকূপে পানি ওঠার পরিমাণ কমে যায়। গরম যত বাড়ে পানীয় জলের সংকটও তত তীব্র হয়। মে মাসে বৃষ্টি শুরু হলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসে।

কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক ও সমিতিপাড়া, কলাতলী ও শুকনাছড়ির কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ১০ থেকে ১৫ ফুটের মধ্যেই অগভীর নলকূপ বসিয়ে পানীয় জল পাওয়া যায়। কিন্তু গত মার্চ মাস থেকে তীব্র খরায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যায়। এ সময় অচল হয়ে পড়ে হাজার হাজার অগভীর নলকূপ। সেসাথে গভীর নলকূপগুলো থেকেও পানির পরিমাণ কমতে শুরু করে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের পর থেকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদ্যা ও প্রকৌশল বিভাগের প্রফেসর ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী বলেন, গত তিন দশকে কক্সবাজারে ভূমির ব্যবহারে ব্যাপকমাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। এতে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের জলাধারের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ কারণে শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর ব্যাপকভাবে নীচে নেমে যাচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ত ও ইউরেনিয়ামথোরিয়ামের মতো ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি সহনীয় মাত্রায় চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিবছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়ে। আর এরপর মেজুন মাসে ভারী বৃষ্টিপাত হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারের অনুমোদন ছাড়া জিএমও পণ্য বাজারে নয়
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬