রেকর্ড মৃত্যু, রেকর্ড শনাক্ত

মারা গেছে ১৬৪ জন, আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার দেশে ভয়ঙ্কর রূপে করোনা

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৬ জুলাই, ২০২১ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রকোপ রুখতে জনজীবন স্থবির করা লকডাউনের মধ্যেই এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আর মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড দেখতে হলো বাংলাদেশকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৪ হাজার নমুন পরীক্ষা করে ৯ হাজার ৯৬৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে আরও ১৬৪ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে। গত বছর মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি। এত মৃত্যুও আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশের মানুষকে।
দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে জুলাইয়ের প্রথম দিন ১৪৩ জনের রেকর্ড মৃত্যুর খবর আসে। ৪ জুলাই তা ছাপিয়ে ১৫৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরদিনই দেশে ১৬৪ জনের রেকর্ড মৃত্যু হলো। খবর বিডিনিউজের।
ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে গত ৩০ জুন সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি হয়। তার আগের দিন ৩০ জুন রেকর্ড ৮৮২২ জন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল। গতকাল তা ছাড়িয়ে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছাল দশ হাজারের কাছাকাছি। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জনে। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৫ হাজার ২২৯ জনের।
গত এক দিনে কেবল ঢাকা বিভাগেই ৪২৫০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশের বেশি। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগেও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর যে ১৬৪ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৫৫ জনই ছিলেন খুলনা বিভাগের বাসিন্দা। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪০ জনের।
নতুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাড়ছিল। গতকাল তা ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। ওই সময় ৩ আগস্ট শনাক্তের হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। তার আগে গত বছরের ১২ জুলাই দৈনিক শনাক্তের হার পৌঁছেছিল ৩৩ দশমিক শতাংশে, যা বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৫ হাজার ১৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৩৯ হাজার ৮২ জন।
মৃতু ১৬৪ জনের মধ্যে ৮৩ জনেরই বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ৪৭ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ১৮ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে এবং ৪ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের ১০৯ জন ছিলেন পুরুষ, ৫৫ জন ছিলেন নারী। ১২৩ জন সরকারি হাসপাতালে, ২৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ১৫ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। হাসপাতালে মৃত নিয়ে আসা হয় ১ জনকে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, করোনাভাইরাসের সামাজিক বিস্তার ঘটায় কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম পর্যায়ে। হাসপাতালে এখন যে রোগীরা আসছেন, তাদের ৫০ শতাংশই গ্রামের।
বর্ষা মৌসুম চলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হলেও মানুষ একে জ্বর, সর্দি-কাশি ভাবছে। সে কারণে হাসপাতালে আসছে কম। আর সময়মতো চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু বেশি হচ্ছে বলে মহাপরিচালকের ভাষ্য। তিনি বলেন, আমরা সবগুলো উপজেলায় কথা বলেছি। সবার পর্যবেক্ষণ একটাই, রোগীদের অনেকেই অঙিজেন স্যাচুরেশন কমে ৪০-৫০ এ নেমে গেলে হাসপাতালে আসছেন। অঙিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে ব্রেইন ড্যামেজ আগেই হয়ে যায়। এ ধরনের রোগীদের বাঁচানো খুব কঠিন হয়। গ্রামের রোগীরা অসতর্ক। গ্রামের বয়স্ক মানুষ হাসপাতালে আসেন অনেক পরে। এ কারণে মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে।
ঢাকা নগরীসহ জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বাধিক ৩১৯৫ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ বিভাগের টাঙ্গাইলে ২২৭ জন, ফরিদপুরে ১৭৬ জন, নারায়ণগঞ্জে ১১২ জন এবং কিশোরগঞ্জে ১০৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে গত এক দিনে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৫৫৯ জন, কুমিল্লায় ১৭৪ জন, নোয়াখালীতে ১৫৮ জন এবং কঙবাজারে ১৪০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬০৫টি ল্যাবে ৩৪ হাজার ২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা আগের দিন ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এদিকে, বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ কোটি ৩৮ লাখ ছাড়িয়েছে। আর ৩৯ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালের শতাধিক চিকিৎসককে একযোগে বদলি
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো বাউন্ডারিসহ অবৈধ স্থাপনা