সমাজে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ কমার বদলে বেড়েই চলেছে, যা বর্তমানে একটা সংস্কৃতিতে রূপ নিচ্ছে। একে সাধারণীকরণ করারও এক কুচক্র চলছে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনৈতিক আলোচনায়, এ ধরনের বিষয় নিয়ে গভীরভাবে বিভ্রান্তিকর আচরণ করা হয়। যা প্রায়ই ক্রমাগত ভিকটিম–ব্লেমিং–এর দিকে পরিচালিত হয়, জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে অপরাধীদের সহায়তা করে। এ পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের কেইসগুলোকে পর্যালোচনা করা যেতে পারে। ধর্ষণ পরবর্তী কার্যক্রম এবং পদক্ষেপ নিয়েও পর্যালোচনা জরুরি। নারীদের ভিক্টিম ব্লেমিং করা এবং পণ্য হিসেবে গড়ে তোলার যে সংস্কৃতি তা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। তবে এধরণের প্রচারণা কতটা মানুষ দেখছেন এবং উপলব্ধি করছেন তা ভাববার বিষয়। এও উপলব্ধিতে আসে, এই তিন দেশের বাস্তব চিত্রকে গবেষণা করার পরে হয়তো ভিন্ন এক গল্পই সামনে আসবে।
আটলান্টিক কাউন্সিল তাদের অনলাইন ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের রেইপ কালচার নিয়ে ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং রেইপ কালচার; ইন বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। লেখাটি সংক্ষিপ্তভাবে তারই ভাবানুবাদ।
তর্কের খাতিরে অনেকেই বলতে পারেন, লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতন এবং ধর্ষণ সংস্কৃতি রুখতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ২০১২ সালে ভারতে নির্ভয়া ধর্ষণ কান্ড নজিরবিহীন জনরোষের জন্ম দেয়; ডিজিটাল ফোরামগুলো এই অপরাধের ভয়াবহ বিবরণে ভরে গেছে, নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধের প্রতিবাদে জনগণ রাস্তা এবং পাবলিক স্পেস দখল করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বিক্ষোভের পর ২০১৩ সালে ভারতে ধর্ষণবিরোধী কঠোর ফৌজদারি আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও জনসাধারণের চাপ ছিল অপরিসীম। #Me Too(#মিটু) আন্দোলনের আবির্ভাব দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে নারী আইনজীবীদের এমন একটি মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে প্ররোচিত করেছিল যা বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের দ্র্রুত এবং সুরক্ষিত সহায়তা প্রদান করবে। এর মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং পরিষেবা এবং আইনজীবীদের অ্যাক্সেস যারা বিশেষত মহিলাদের ইস্যুতে কাজ করে। ২০২০ সালের গ্রীষ্মে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার প্রতিবাদগুলি ভারতে নিম্ন–বর্ণের হিন্দু দলিতদের দমন এবং পুলিশি বর্বরতার বিষয়ে কথোপকথনকে উৎসাহিত করেছিল, অনেক নাগরিক অধিকার কর্মী সমান্তরাল নিপীড়নমূলক কাঠামো তুলে ধরতে এবং ভারতে দলিতদের যুগ যুগ ধরে দমনের বিরুদ্ধে সমাবেশ করার জন্য একটি স্লোগান হিসাবে “লো কাস্ট লাইভস ম্যাটার” গ্রহণ করেছিল। এই প্রতিবাদগুলি নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়াও বর্ণবাদের থিমগুলিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রথম নজরে, অর্থবহ সংস্কারের দিকে পরিচালিত করেছে বলে মনে হয়।পাকিস্তানের দুই সন্তানের সামনে এক মাকে গণধর্ষণের ঘটনায় লাহোরের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার ভুক্তভোগী–দোষারোপমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে জাতীয় হৈচৈ শুরু হয়েছিল। নারীর প্রতি সহিংসতার অনুরূপ ঘটনার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া থেকে এটি একটি স্বাগত প্রস্থান ছিল বলা যায়। ২০০২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সি, মুখতারান মাই তার ভাইয়ের কথিত ব্যভিচারের জন্য “প্রায়শ্চিত্ত” হিসাবে গণধর্ষণের পরে আন্তর্জাতিক শিরোনামে এসেছিলেন। তবে ন্যায়বিচারের জন্য তার অনুসন্ধান গণ নিন্দার মুখোমুখি ছিল। সাম্প্রতিক পাকিস্তানি #Me Too(#মিটু) আন্দোলন, যা প্রতি বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অনুষ্ঠিত ক্রমবর্ধমান সোচ্চার এবং বিতর্কিত নারী অধিকার মিছিলে জড়িত। এখন তারা বৈবাহিক ধর্ষণের মতো বিষয়গুলির প্রতিক্রিয়া হিসাবে “আমার শরীর, আমার পছন্দ” এর নারীবাদী স্লোগান গ্রহণ করেছে। এই স্লোগানগুলি রাস্তায় এবং প্রাইমটাইম টেলিভিশন উভয় ক্ষেত্রেই মূলধারার প্ল্যাটফর্মগুলিতে দেশব্যাপী বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, যদিও বাংলাদেশ লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নিয়ে গর্ব করে– যেমন প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় তুলনামূলকভাবে উচ্চ মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ ইত্যাদি বলে থাকে কিন্তু দেশটিও নারীর বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধের বড় বড় সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। গত বছর নোয়াখালী গণধর্ষণের পর যখন মানবাধিকার কর্মীরা পরিসংখ্যান তুলে ধরেন যে, শুধু ২০২০ সালের প্রথম নয় মাসে নারীর বিরুদ্ধে ৯৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে এবং দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে, তখন কর্মকর্তারা দ্রুত মৃত্যুদণ্ডকেই শাস্তি হিসেবে গ্রহণ করেন।
দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধের যে প্রেক্ষাপট আমরা বিশ্লেষণ করি, তা বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে উত্থিত হয়েছে এবং সংস্কারের দিকে ঝুঁকছে। যাইহোক, গুরুতর সমস্যাগুলি রয়ে গেছে, এবং সামাজিক প্রবণতাগুলি যা আমাদের গেলানো হয় তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, জাতিগত এবং রাজনৈতিক লাইন অতিক্রম করে।বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এই অঞ্চলের অনেক দৃশ্যমান প্রবণতা নারী এবং সমাজের অন্যান্য দুর্বল অংশের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার পরিবেশকে স্থায়ী করে:
১) ধর্ষণের সংজ্ঞা: সংজ্ঞাটি মূলত দেড়শ বছরের পুরনো ঔপনিবেশিক সংজ্ঞার উপর ভিত্তি করা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, সংজ্ঞাটি সংকীর্ণভাবে নারীদের অবহিত এবং ইচ্ছাকৃত সম্মতি ছাড়াই লিঙ্গ অনুপ্রবেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই সংজ্ঞাটি অল্প বয়স্ক ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে খারিজ করে, যেমন কিছু ইসলামিক মাদ্রাসা তার বিরাট উদাহরণ। যদিও ভারতের ২০১২ সালের বিক্ষোভের ফলে ধর্ষণের পুরানো সংজ্ঞায় হয়রানি, পিছু নেওয়া এবং অ্যাসিড আক্রমণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরিবর্তন করা হয়েছিল যা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বাস্তবায়ন দুর্বল ছিল এবং বৈবাহিক ধর্ষণের ঘটনাকে একবারে খারিজ করা হয়েছিল। পাকিস্তানে ২০০৬ সালে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলেও বাংলাদেশে বা ভারতে তা হয়নি। আইন পরিবর্তনের বিরোধিতা বেশ কয়েকটি উচ্চ মহল থেকে শোনা গেছে, যার মধ্যে একজন প্রাক্তন ভারতীয় প্রধান বিচারপতি মন্তব্যে বলেছিলেন যে, বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হবে।
২) ধর্ষণকে ঘিরে কলঙ্ক: ধর্ষণের শিকার নারীদের কলঙ্ক এ ধরনের ঘটনাকে কম রিপোর্ট করার একটি বড় কারণ। ধর্ষণের শিকার ব্যক্তিরা মুখ খুলতে ভয় পায় কারণ তারা বিশ্বাস করে যে তারা ন্যায়বিচার পাবে না বরং তাদের পরিবার, সম্প্রদায় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা আজীবন অপমানের মুখোমুখি হতে হবে। এই ধরনের কলঙ্ক তীব্র প্রাতিষ্ঠানিক লিঙ্গবাদ এবং পিতৃতন্ত্রের উপর ভিত্তি করে, যেখানে সম্মানের ধারণাটি নারীর দেহের সাথে সংযুক্ত থাকে। সম্ভবত এ কারণে নোয়াখালী গণধর্ষণকারীরা দুঃসাহস করে ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
৩) সরকারের ন্যায় বিচারের ফাঁপা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি ব্যাপক ভিকটিম– ব্লেমিং : দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্ষণের ঘটনার জন্য ভিকটিম–ব্লেমিং ব্যাপক হারে ঘটে, যা মিডিয়া এবং পপ সংস্কৃতির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের সমালোচকরা মনে করেন লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতন এবং ধর্ষণ সংস্কৃতির পদ্ধতিগত কারণগুলি সমাধান করা এড়াতে সরকারের কেবল একটি ‘কপ–আউট’ এর সুযোগ দিবে। বরং অ্যাক্টিভিস্টরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে সাম্প্রতিক হাই প্রোফাইল মামলায় মৃত্যুদন্ডের শাস্তি ধর্ষণের পরিসংখ্যান পরিবর্তন করতে খুব কমই কাজ করেছে। ভারতে ধর্ষণ সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা গেছে যে মৃত্যুদন্ড প্রবর্তন এবং ধর্ষণের ঘটনা হ্রাসের মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই। এই কারণগুলির সংমিশ্রণ কেবল এই আখ্যানটি এই যে ধর্ষণের শিকারদের তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতার জন্য দোষারোপ করা হয় এবং বিচার প্রক্রিয়াগুলি প্রায়শই কার্যকরের চেয়ে বেশি বাহ্যিক লেবাসেই থেকে যায়।
৪) আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং শক্তিশালী গোষ্ঠীর জড়িত থাকা: গত বছর ভারতে হাথরাস গণধর্ষণের ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী অপরাধীরা সম্পূর্ণ দায়মুক্তি ভোগ করেছিল কারণ তারা ক্ষতিগ্রস্থদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করার পরিবর্তে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছিল। একটি স্পষ্ট উদাহরণ দেখা যায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক অভিনেতারা কীভাবে অপরাধীদের আড়াল করতে পারে এবং বাস্তবে তাই ঘটে।
৫) গণমাধ্যমের ভূমিকা: দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের, যেমন ব্যাপক জনপ্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প বলিউডকেও জবাবদিহি করতে হবে। তাদের বিষয়বস্তু দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে গ্রাস করা এবং এইভাবে নারী এবং লিঙ্গ সম্পর্কিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ম নির্ধারণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব বহন করে। বলিউডে উৎপাদিত বেশিরভাগ বিষয়বস্তু পুরুষতান্ত্রিক আধেয়কে সমর্থন করে যেখানে প্লট এমনভাবে দেখায় যে যৌন বা আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীদের কোনও এজেন্সি নেই। তারা বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর “আইটেম গান” সন্নিবেশ করে নারীর হাইপার অবজেক্টিফিকেশনকে স্বাভাবিক করে তোলে, যা একটি চলচ্চিত্রের প্লট লাইনের মধ্যে ব্যবহৃত হয় এবং নারীকে পুরুষের দৃষ্টিতে বস্তু হিসাবে চিত্রিত করে।
সুপারিশকৃত নীতি
১) ধর্ষণকে সহিংস অপরাধ হিসেবে গণ্য করার শিক্ষা: শিক্ষাক্রমে অল্প বয়স থেকেই লিঙ্গ সংবেদনশীলতা ব্যাপকভাবে জাগ্রত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশে, কিছু অধিকার গোষ্ঠী জাতীয় স্কুল পাঠ্যক্রমের অংশ হিসাবে কার্যকর যৌন শিক্ষার জন্য চাপ দিচ্ছে। ভারতে, গত দশকের গোড়ার দিক থেকেই আলোচনা চলছে। যেমন হার্ভার্ড স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ডাঃ জ্যাকলিন তার স্কুলে শিশুদের সাথে লিঙ্গ এবং লিঙ্গ নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা, তাদের বিপরীত লিঙ্গের সদস্যদের সাথে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয় তা শেখানো সহ ইত্যাদি কার্যক্রম বেশ শিক্ষণীয়। সামাজিকীকরণ শিক্ষায় অবশ্যই প্রথম বয়স থেকেই ধর্ষণকে অপরাধ বলে গণ্য করা শেখাতে হবে। তখনই শিশুরা সমাজে অন্যদের প্রতি মানবিক মনোভাব এবং অভ্যাস গড়ে তুলবে।
২) ‘বিবর্তন’ এবং ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞা সংশোধন: তিনটি দেশের সুশীল সমাজের কর্মীদের ধর্ষণের আইনি সংজ্ঞা পরিবর্তনের জন্য একটি পিটিশন গঠন করা উচিত। ২০২০ সালের অক্টোবরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে ট্রান্সজেন্ডার ভুক্তভোগীদের এই জাতীয় আবেদনের শুনানি হয়েছিল যেখানে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে ধর্ষণের সংজ্ঞায় অন্য ব্যক্তির সাথে যে কোনও ধরণের জোরপূর্বক যৌন ক্রিয়াকলাপ অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, এইভাবে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের লিঙ্গ–নিরপেক্ষ সংজ্ঞা প্রতিফলিত করে। এই সংজ্ঞায় হিজড়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি বৈবাহিক ধর্ষণকেও অন্তঃর্ভুক্ত করা উচিত।
৩) সাক্ষীর সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা: সাক্ষী সুরক্ষা নীতিগুলি নিশ্চিত করে যে লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতন মামলাগুলি অনুসরণ এবং লড়াই করার সময় কোনও ব্যক্তি ভয় দেখানো থেকে সুরক্ষিত। বাংলাদেশে সাক্ষী সুরক্ষা আইনের খসড়া প্রায় ১৫ বছর আগে তৈরি করা হলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। এ ধরনের আইন ভারত ও পাকিস্তানে প্রয়োগ করা উচিত এবং চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশেও তা পাস করা উচিত। এই কাঠামোগুলি যুক্ত করা অভিযুক্ত ধর্ষক (গুলি) এবং সমর্থকদের কাছ থেকে প্রতিশোধের ঝুঁকিপূর্ণ নারীদেরও রক্ষা করবে।
৪) নারীদের জন্য অনলাইনে “সেফ স্পেস” তৈরি করা: কয়েক বছর আগে, অক্সফোর্ড প্রশিক্ষিত একজন আইনজীবী ভারতে যৌন হয়রানি এবং শ্লীলতাহানির অভিজ্ঞতা রেকর্ড করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছিলেন। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে নারীরা তাদের অ্যাকাউন্ট অজ্ঞাতনামা পরিবেশে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং ভুক্তভোগীরা নৈতিক সমর্থন ও সহানুভূতি পান। নতুন উদ্যোগগুলি পশ্চিমা দেশগুলিতে উপস্থিত সংস্থাগুলির উপর ভিত্তি করে আইনী পরামর্শ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং ট্রমা সংস্থানগুলিও সরবরাহ করতে পারে।
৫) সেন্সরশিপ প্রতিষ্ঠানগুলির অগ্রাধিকারে পুনর্মূল্যায়ন: ভারতে একটি শক্তিশালী সেন্সরশিপ বোর্ড রয়েছে যা নারীবিরোধী বলে বিবেচিত বা চলচ্চিত্রে নারীবিদ্বেষী দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে এমন সামগ্রী সেন্সর করার ক্ষমতা রাখে। তবুও, অতীতে এর অগ্রাধিকারগুলি যৌন স্পষ্ট দৃশ্যগুলি সেন্সর করার দিকে মনোনিবেশ করেছিল যখন নারীর দেহকে অবজেক্টিফাই করে এমন দৃশ্যের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ ছিল। যদি সৃজনশীল স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে, তবে চলচ্চিত্রে নারীবিরোধী দৃশ্যগুলিতে কমপক্ষে বিধিবদ্ধ সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
৬) ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ প্রকল্পের জন্য আন্তর্জাতিক এবং কর্পোরেট অর্থায়ন: “দেবী” নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের অনুরূপ হতে পারে বিষয়টা। সিনেমাটি গত বছর ভারতে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল কারণ এটি দেখিয়েছিল যে ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা যে কোনও বয়সের এবং সামাজিক অবস্থানের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, এই সারির বৃহত্তর প্রকল্পগুলি কর্পোরেট হাউসগুলির দ্বারা অর্থায়ন করা উচিত যাতে কেবল জনগণকে বিনোদন দেওয়া মুখ্য উদ্দেশ্য না হয়, বরং নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর বার্তা প্রচার করা যায়।