রুমায় সোনালী ব্যাংকে হামলা, ম্যানেজারকে অপহরণ

পুলিশ-আনসারের ১৪টি অস্ত্র ও দেড় কোটি টাকা লুট অভিযোগ কেএনএফের বিরুদ্ধে, অভিযানে যৌথ বাহিনী

বান্দরবান প্রতিনিধি | বুধবার , ৩ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকে হামলা করে পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র, ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে প্রায় দেড় কোটি টাকা লুট এবং ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা। অস্ত্রধারীদের হামলায় ইউএনও অফিস ও ব্যাংকের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযোগের তীর পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) দিকে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানান, রুমা উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রুমা সোনালী ব্যাংকের শাখা চারদিকে শতাধিক সশস্ত্র সদস্য ঘেরাও করে লুট করেছে কেএনএফের সদস্যরা। এ সময় ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে প্রায় দেড় কোটি টাকা লুট করেছে। বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে তাদের ১৪টি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় তারাবি নামাজ শেষে ফেরার পথে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার, লুট করা অস্ত্র ও টাকা উদ্ধারে অভিযানে নেমেছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। রুমা উপজেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ইউএনও অফিসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক জরুরি মিটিং করেছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার ভূমি) দিদারুল আলম জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাণ্ডব চালিয়েছে রুমায়। সোনালী ব্যাংকের প্রায় দেড় কোটি টাকা লুট এবং ব্যাংক ও ইউএনও অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের মারধর করে সবার মোবাইল ফোন, নগদ টাকা এবং পুলিশ, আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় পথ থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে ধরে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। মারধরে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে কেউ গুরুতর আহত হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা। প্রায় ১শ জনের মতো সশস্ত্র সদস্য রুমা উপজেলা পরিষদসহ আশেপাশের এলাকা ঘেরাও করে লুটপাট চালিয়েছে।

রুমার ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করেছে বলে শুনেছি। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। রুমায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, রুমায় ব্যাংক লুট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে। অনেককে মারধর করেছে। ব্যাংক ম্যানেজারকেও ধরে নিয়ে গেছে বলে খবর পেয়েছি। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে এখনো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। উপজেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

বিডিনিউজ জানায়, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, রাত ৯টার দিকে তারা রুমা শাখায় হামলা করেছে। কুকি চিন গোষ্ঠীর সদস্য হতে পারে শোনা যাচ্ছে। তাদের সঠিক পরিচয় এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। তারা আমাদের শাখা ব্যবস্থাপককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ম্যানেজারের খোঁজ এখনো পাইনি। ভল্ট ভাঙতে পেরেছে কিনা তাও সঠিক জানি না। আমরা কেবলমাত্র শুনলাম, চেষ্টা করছি তথ্য পেতে। পুলিশ ও সেনা সদস্যদের জানানো হচ্ছে।

এই শাখায় লেনদেন কম হয়, টাকার পরিমাণ তাই অনেক কম থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রুমা শাখা বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকায় হওয়ায় শাখাটিতে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকে। ব্যাংকের নিজস্ব অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কমীও ছিল। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হামলায় তারা টিকতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধর্ষণ শেষে খুন, পরে ফেলেছিল ডাস্টবিনে
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে ঈদযাত্রা আজ থেকে