বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের বদলে রুপি ব্যবহারের প্রস্তাব ভারতের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এই সফরে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং শুল্ক/অশুল্ক বাধা অপসারণের মাধ্যমে বাণিজ্য সহজীকরণ, ভারত থেকে উচ্চ ফলনশীল রাবার ক্লোন আমদানি, ব্যবসায়ীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ভিসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত এসব বিষয়ে বাংলাদেশকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। বাংলাদেশ–ভারত বাণিজ্যে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ডলারের পরিবর্তে ভারতীয় রুপি ব্যবহারের বিষয়ে ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের চাহিদা অনুযায়ী ভারত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা দিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। প্রতিবেশী এ দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য অনেকটাই ঝুঁকে আছে ভারতের দিকে। ২০২১–২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, তার বিপরীতে ভারত থেকে আমদানি করেছে ১ হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের পণ্য। অর্থাৎ, ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪২০ কোটি ডলারের মত।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডলারের বাজার অস্থির হয়ে উঠলে চাপে পড়ে বাংলাদেশের রিজার্ভ। ওই অবস্থায় পণ্য বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রা ও পেমেন্ট সিস্টেম খোঁজ শুরু করে বাংলাদেশ। এর অংশ হিসেবে চীনা মুদ্রায় দেশের ব্যাংকে লেনদেনের সুযোগ বাড়ানো হয়। ভারতের সাথেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে রূপি ও টাকায় লেনদেন করার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেয় গত আগস্টে। কিন্তু দুই দেশের বাণিজ্যে বড় ঘাটতিতে থাকায় নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনে বাংলাদেশের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করবে কি না, সে বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে অর্থনীতিবিদদের। আর ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মনে করেন, পুরোপুরি না হলেও ভারতের সঙ্গে আংশিক বাণিজ্য রুপি আর টাকায় হলে দুই দেশই সুবিধা পেতে পারে।
প্রতিবছর ভারত থেকে প্রয়োজনীয় চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডাল আমদানি করে বাংলাদেশ। অনেক সময় ভারত হঠাৎ করে পণ্য রপ্তানি বন্ধ রাখে। তাতে বাংলাদেশকে সমস্যায় পড়তে হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভারত সরকার এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে বার্ষিক কোটা নির্ধারণ করতে সম্মত হয়েছে। গত বেশ কয়েক বছরের আমদানি–রপ্তানির তথ্য পর্যালোচনা করে এসব পণ্যের বার্ষিক পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি পণ্য পাটজাত সামগ্রী ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। এ ডিউটি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সেপা) নামে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য একমত হয়েছিলেন জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, সেটা যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পাদন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করে একমত হওয়া গেছে। আশা করা যায়, অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে।
ভারত সফরকালে সেদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন টিপু মুনশি। এছাড়া ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনেরও সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত সচিব (ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক) মো. হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. আব্দুর রহিম খান উপস্থিত ছিলেন।