ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্তো প্রদেশের নোভা ভেনিসিয়া শহরের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। পাঁচ সন্তানের পরিবারে রিচার্লিসন সবার ছোট। বাবা দৈনিক মজুরির রাজমিস্ত্রি। মা রাস্তায় ঘুরে ঘুরে আইসক্রিম, চকলেট বিক্রি করতেন। দু’বেলা পেটপুরে খেতে পারেননি, এমন বহু দিন দেখতে হয়েছে রিচার্লিসনকে। পরিবারের আয়ে অবদান রাখতে ছোটবেলায় রাস্তায় চকলেট, আইসক্রিম বিক্রি করেছেন রিচার্লি। গাড়ি ধোয়ার কাজও করেছেন নিয়মিত। এসব বেশ স্বচ্ছন্দেই করেছেন তিনি। কিন্তু বারবার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে মাদকের কারণে। নোভা ভেনিসিয়া মোটেও নিরাপদ শহর নয়। ব্রাজিলের মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যও বলা হয় এই শহরকে। হরহামেশা মাদক চোরাচালানি, মাদাক ক্রয়-বিক্রয় বা মাদক সেবন দেখেই বেড়ে উঠতে হয় এই শহরের শিশুদের। রিচার্লিসনকেও দেখতে হয়েছে সেই পরিস্থিতি। তবে নিজে কখনো সেই পথে পা বাড়াননি। বাবা-মায়ের কড়া নজরদারি ছিল। তবুও একবার পড়তে হয়েছিল বড় বিপদে। মাদকব্যবসায়ী চক্রের একজন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করতে চেয়েছিলেন রিচার্লিসনকে। টাইমস-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা নিজেই বর্ণনা করেছেন রিচার্লিসন। বলেছেন, ‘আমার অনেক বন্ধুরা রাস্তায় মাদক বিক্রি করত। সহজে অর্থ আয়ের সেটিই ছিল দারুণ সুযোগ। ঠিকঠাক মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে পারলে বেশ ভালো অর্থ পাওয়া যেত। কিন্তু আমার মা-বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন, এভাবে অর্থ আয় করা ঠিক নয়, সেটি অন্ধকার উপায়। আমি তখন আমার মায়ের সঙ্গে চকলেট, আইসক্রিম বিক্রি করতাম। বাড়তি কিছু উপার্জনের জন্য বেছে নিতাম বড়লোকদের গাড়ি ধোয়ার কাজ। এই কাজগুলোকেই আমি টাকা আয়ের সঠিক উপায় হিসেবে জানতাম, বিশ্বাস করতাম। আমি আমার মাকে সাহায্য করতাম, যতটা পারতাম।’ ১৪ বছর বয়সে একবার কিভাবে প্রাণ নিয়ে সংশয়ে পড়েছিলেন সেই গল্প শুনিয়েছেন রিচার্লিসন, ‘একদিন আমরা ছোটরা রাস্তায় খেলছি। হঠাৎ এক মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী খেলা থামিয়ে আমার মাথায় বন্দুক তাক করল। সে ভেবেছিল, আমি হয়তো তার দলেরই ছেলে, পালিয়েছি। সে আমাদের হুমকি দেয়, আবার যদি তার মুখোমুখি আমি হই, তাহলে বন্দুকের ট্রিগার টিপে দিতে তার এতটুকু সময় লাগবে না। কী মনে করে, সে সেদিন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল।’ নিজের ফুটবলার হয়ে উঠার গল্প শুনিয়েছেন রিচার্লিসন। বাবা খুব করেই চাইতেন তিনি ফুটবলার হোন। একদিন হঠাৎ করেই তার জন্য কয়েকটা বল কিনে এনেছিলেন। রাস্তায়, ফাঁকা গলিতে ফুটবল খেলতেন বন্ধুদের সঙ্গে। একবার এক ব্যবসায়ীর দৃষ্টি পড়ে তরুণ রিচার্লিসনের ওপর। তিনি দেখেই বুঝে গিয়েছিলেন, এই ছেলে অনন্য প্রতিভা। রিচার্লিসনকে একজোড়া নতুন বুট কিনে দেন ওই ব্যবসায়ী। আমেরিকা মিনেইরো নামের একটি দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাবে নিয়ে যান তাকে। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ফ্লুমিনেস হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল ওয়াটফোর্ড। সেখান থেকে চলতি মৌসুমে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডে নাম লেখান টটেনহামে। প্রিমিয়ার লিগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নিজেকে আরেকধাপ উপরে তুলেছেন রিচার্লিসন।