সংবাদটি ছোটো। প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীর ১২ মে। ‘রাস্তা দখল করে পার্কিং বাণিজ্য’। এতে বলা হয়েছে, নগরীর পাহাড়তলীতে রাস্তা দখল করে পার্কিং বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে চলাচলের রাস্তা দখল করার অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ। এ সময় বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ ২৭টি গাড়ি আটক ও পাঁচটি মামলা করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে পাহাড়তলী থানাধীন অলংকার, বিটাক, শফি মোটর্স এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার পেয়ার আহম্মেদ ও ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই প্রশাসন) জাহিদ হোসেন। অভিযানকালে ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই প্রশাসন) জাহিদ হোসেন বলেন, বিটাক অলংকার ও শফি মোটর্স এলাকায় রাস্তা দখল করে পার্কিং বাণিজ্য ও পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় যেন অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আবারো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকবে।
সংবাদটি ছোটো হলেও গুরুত্ববহ। যদিও চট্টগ্রামের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির অভিযোগ অনেক আগে থেকেই। ইতোপূর্বে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরের প্রায় অর্ধশত সড়কের ফুটপাত এবং মোড়ে সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের নামে নির্মাণ করা হয়েছে দোকান। ফলে সংকুচিত হয়েছে পথচারী হাঁটার পথ। অনেক সময় বাধ্য হয়ে পথচারীকে সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। অনেক ফুটপাতে ছাউনি নির্মাণ করা হলেও সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে বাণিজ্যিক দোকান। সৌন্দর্যবর্ধন ও সবুজায়নের বিষয়টি প্রশংসনীয় হলেও ফুটপাত দখল করে দোকান ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় পুরো উদ্যোগটিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে গাড়ি চলাচল নিবিঘ্ন রাখার বাইরে পথচারীদের চলাচলের জন্যই ফুটপাত। সেই ফুটপাত দেখভালের দায়িত্বও প্রশাসনের। কেউ ফুটপাত দখল করলে উচ্ছেদের দায়িত্বও তাদের। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ তো পরের কথা উল্টো চট্টগ্রামে ফুটপাত দখলে সহযোগিতায় ব্যস্ত সিটি করপোরেশন (চসিক)-এমন অভিযোগও শোনা যায়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে হাঁটা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার। এটা দোকানদার ও হকাররা দখল করে রাখছে। ফুটপাতে দোকান বসানো নগর পরিকল্পনার কোনো শালীনতার মধ্যে পড়ে না। ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। পৃথিবীর সব দেশে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। যাতে মানুষ অল্প দূরত্বের পথ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারে।’ তাঁরা বলেন, ‘পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফুটপাতের পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। আর আমাদের দেশে হচ্ছে উল্টো, ফুটপাতে দোকান করা হচ্ছে। চলে যাচ্ছে অবৈধ দখলে। এগুলোর পেছনে প্রভাবশালী মহলের কিছু আর্থিক বিষয় জড়িত থাকার ফলে প্রশাসন চাইলেও সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। তবে নাগরিকদের যে অধিকার আছে, তা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। ফুটপাত হচ্ছে হাঁটার জন্য।’
নগরের ফুটপাতগুলোর দিকে তাকালে করুণ চিত্র ভেসে ওঠে। ফুটপাত যে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, একটা চরম বিশৃঙ্খলা এবং সময়ের বিশাল অপচয় হচ্ছে– যার ফলে মানুষের জন্য নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে যেন তাকানোর সময় নেই কারো। ইতোপূর্বে সম্পাদকীয়তে আমরা লিখেছিলাম, ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক–ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারমুক্ত করতে প্রায় অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকালে অভিযান চালালে বিকেলে আবারো দখল হয়ে যায়। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা বিশেষ দল মাঠে নামিয়েছে সংস্থাটি। দলটি উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করবে। এ সময় কোথাও পুনর্দখল হতে দেখলে সাথে সাথে আবারো উচ্ছেদে ‘অ্যাকশন’ শুরু করবে। এ ছাড়া সারা শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক ও ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করবে নবগঠিত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর সদস্যরা। সেই অ্যাকশনের নিয়মিত অভিযান চান চট্টগ্রামবাসী। তাঁরা চান, নগরের সড়ক ও ফুটপাত যেন সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে।