রাসুলুল্লাহ (সা.) কে ভালোবাসা ঈমানের আলামত

ফখরুল ইসলাম নোমানী | শুক্রবার , ২০ জুন, ২০২৫ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মত। আর উম্মতে মুহাম্মদীর অনুসারী ও দাবিদার হিসেবে আমাদের ওপর নবী (সা.) এর কিছু অধিকার রয়েছে। যেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া একজন মানুষ প্রকৃত মুসলমান বা নবীর উম্মতের দাবিদার হতে পারে না। রাসুলকে (সা.) ভালোবাসা ঈমানের আলামত। খোদ আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তার কাছে আমি তার পিতামাতার চেয়ে, সন্তানাদির চেয়ে এবং সমস্ত মানুষের চেয়ে প্রিয় না হবো। প্রত্যেক মুমিনই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসেন। ভালোবাসা উচিতও। শুধু তাঁকে ভালোবাসলেই হবে? আর আমরা কয়জনই বা জানি যে নবীজিরও কিছু হক আছে আমাদের ওপর। হক আদায় তো দূর কি বাত! তাই আজ আমরা আমাদের ওপর নবীজির কিছু গুরুত্বপূর্ণ হক সম্পর্কে জেনে নেব। এবং সে অনুযায়ী আমল করে বেশি বেশি নেকি হাসিল ও তাঁর সাফায়ত অর্জন করব ইনশাআল্লাহ। নবীজির প্রতি আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ হক রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: নবীজির প্রতি ঈমান আনা, তাঁর রিসালাতকে বিশ্বাস করা, তাঁর সুন্নাতকে অনুসরণ করা এবং তাঁর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা রাখা। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে তাঁর সাহাবায়ে কেরাম আহলে বাইত এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতিও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার অর্থ হলো তাঁর দেখানো পথ ও আদর্শকে অনুসরণ করা। তাঁর সুন্নত অনুযায়ী জীবনযাপন করা এবং তাঁর শিক্ষাগুলোকে নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।

এক. রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর পরিপূর্ণ ঈমান আনয়ন করা। তিনি আল্লাহর রাসুল। তিনি যা কিছু বলেছেন এবং করেছেন সব সঠিক এই সাক্ষী দেওয়া। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.)-যা বলতেন আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলতেন। একটি কথাও নিজে থেকে বলতেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন তিনি (মুহাম্মদ) নিজ থেকে যা খুশি বলেন না এটা ওহি ছাড়া আর কিছুই না যা তার কাছে পাঠানো হয়। (সুরা নজম : )

দুই. আমাদের ওপর নবীজির (সা.) দ্বিতীয় হক হলো তাঁর সুন্নাহগুলো অনুসরণ করা। বিলুপ্ত হওয়া সুন্নতগুলো সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে তাঁর আদর্শকে সামনে রাখা। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন হে নবী আপনি বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহতায়ালাও তোমাদের ভালোবাসবেন। (সুরা ইমরান : ৩১)

তিন. নবীজিকে (সা.) ভালোবাসা হলো আমাদের ওপর তাঁর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক। সে ভালোবাসা হতে হবে মাবাবা, সন্তানসন্ততি, এমনকি নিজের জীবনেরও বেশি। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন তোমাদের কেউ সত্যিকার পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতামাতা ও সন্তানসন্ততি এবং সব মানুষের চেয়ে অধিক প্রিয় না হই।

চার. আমাদের ওপর নবীজির (সা.) আরেকটি বিশেষ হক হলো তাঁর ওপর দরুদ পাঠ। কারণ ফেরেশতারাও নবীজির ওপর দরুদ পড়েন। কেননা দরুদ পাঠে আল্লাহ খুশি হন। তিনি খুশি হয়ে রহমত নাজিল করেন। গুনাহ মাফ হয়। মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার ওপর দশটি রহমত বর্ষণ করবেন। এবং তার দশটি গুনাহ মাফ করা হবে। তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে।

নবীজির প্রতি উম্মতের সবচেয়ে বড় হক হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা। তার প্রতি ভালোবাসা যেন আর সব ভালোবাসার ঊর্ধ্বে হয়। মহান আল্লাহ আমাদের সেই পথেই পরিচালিত করুন এবং প্রিয় নবীর আনুগত্যে জীবন কাটিয়ে তার সুপারিশের সৌভাগ্য অর্জনের তওফিক দান করুন এমনকি জান ও প্রাণের চেয়ে যেন তিনি প্রিয় হন। তাই আমরা বেশি বেশি দরুদ পড়ব। আর সবচেয়ে ছোট দরুদ হলো সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এমন একজন মমতাময়ী নবী যার তুলনা ইতিহাসে নেই। তিনি ছিলেন এমন দরদি যার হৃদয়ে উম্মতের প্রতি ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। তিনি নিজের প্রশান্তি ও স্বস্তির চেয়ে উম্মতের মুক্তির জন্য অধিক ব্যাকুল ছিলেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রিয় নবীজির চরিত্র এভাবে চিত্রিত করেছেন, তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসুল এসেছেন তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার নিকট খুবই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী মুমিনদের প্রতি করুণাসিক্ত বড়ই দয়ালু। (সুরা তওবা : ১২৮) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু নিজের সময়ের মানুষের জন্য ছিলেন না বরং কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকলের জন্য কল্যাণকামী। তিনি যে ব্যাকুলতা নিয়ে আল্লাহর দরবারে উম্মতের মুক্তির জন্য কান্নাকাটি করতেন তা কল্পনাকেও অতিক্রম করে। কোনো নবী তার উম্মতের জন্য এত কাতর ছিলেন না। তিনি উম্মতের জন্য বিশেষ দোয়া জমা রেখেছেন পরকালের জন্য যেদিন কেউ কারও উপকারে আসবে না সেদিন তিনি তার উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। এমন মহান ভালোবাসার প্রতিদান কীভাবে দেওয়া উচিত সেই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন তিনি। কেবল তার প্রতি আবেগ বা মুখে ভালোবাসার দাবিই যথেষ্ট নয় বরং তার আদর্শ অনুসরণ কোরআনসুন্নাহর ওপর আমল এবং জীবনব্যাপী তার দেখানো পথে চলাই হলো প্রকৃত ভালোবাসার নিদর্শন।

আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সাথে সম্পর্ক রাখেন এমন মানুষদের ভালোবাসাও তাকে ভালোবাসার আলামত। সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, বিশেষ করে চার খলিফা, হজরত হাসান ও হুসাইন, মুমিনদের মা (রাসুলের স্ত্রীগণ), ও রাসুল (সা.)-এর মেয়েদের প্রতি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা রাখাও ঈমানি দায়িত্ব। মুমিনের জন্য ভালোবাসার মূল কেন্দ্র স্বয়ং আল্লাহপাক তারপর হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আর বাকি দুনিয়ার যতো প্রেমময় মানুষ আছে যতরকমের ভালোলাগার জিনিস আছে সবকিছুর অবস্থান দ্বিতীয়তে। এই থেকে বোঝা যায় আল্লাহর রাসুলকে ভালোবাসা আমাদের প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পারি ইমামুল আম্বিয়া, সাইয়িদুল মুরসালিন, খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) হলেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব, প্রিয় বন্ধু। আল্লাহর ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব পেতে হলে প্রিয় নবী (সা.) এর আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। সহজে বলা যায় রাসুল (সা.) এসেছিলেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করতে। এ বিষয়ে নবী করিম (সা.) বলেন : আমি আল্লাহর অতিপ্রিয় বন্ধু গৌরব করি না। রাসুল (সা.) কে ভালোবাসা ইমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি উম্মতের উপর তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। রাসুল (সা.) কে ভালোবাসলে ইমানের স্বাদ লাভ করা যায় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। আল্লাহর কাছে সব সময় রাসুল (সা.)-এর শাফায়াত ও নৈকট্য লাভের জন্য দোয়া করা, নবীজির প্রতি উম্মতের সবচেয়ে বড় হক হলো তাকে মন ও মনন দিয়ে ভালোবাসা।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেয়া থামাতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধ‘বর্ণমালার বর্ণমেলা’ সৈয়দ জিয়াউদ্দীনের সৃষ্টিশীলতার অনবদ্য প্রকাশ