রাশিয়ার টিকা উৎপাদন হবে বাংলাদেশে

ফর্মুলা থাকবে গোপন, চুক্তি স্বাক্ষর টিকা পেতে চীনা উদ্যোগেও সাড়া

| শুক্রবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, করোনা টিকা উৎপাদনে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি সই করেছে। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে হওয়া এ চুক্তি অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন করতে পারবো। তবে শর্ত রয়েছে যে কোম্পানি টিকা উৎপাদন করবে, তাকে ফর্মূলা গোপন রাখতে হবে। এদিকে ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার নতুন চালান অনিশ্চয়তায় পড়ার মধ্যে চীনের একটি উদ্যোগেও যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘ইমার্জেন্সি ভ্যাকসিন স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি ফর কোভিড ফর সাউথ এশিয়া’ নামক এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হওয়ার সাড়া দেওয়ার কথা গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যাদেরই প্রয়োজন হবে, তারা জরুরি ভিত্তিতে সেখান থেকে নেবে। তারা (চীন) বলেছে, এটাতে আপনাদের কোনো আপত্তি আছে কি-না? আমরা বলেছি, এটাতে কোনো আপত্তি নেই। আমরা নীতিগতভাবে পছন্দ করেছি। কারণ যে কোনো দেশেরই জরুরি প্রয়োজন হতে পারে। তখন যদি এখানে এক জায়গায় ভ্যাকসিনটা থাকে। তাহলে সংগ্রহ করা সুবিধা হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। স্টোরেজে কোন দেশে উৎপাদিত টিকা থাকবে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। চীনের এই উদ্যোগে বাংলাদেশের পাশাপাশি আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও সম্মতি দিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান। তিনি বলেন, ১৫ এপ্রিল চীনের পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব এসেছে। গতকাল পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে চীনের ভাইস মিনিস্টারের বৈঠক হয়েছে। পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড কিনে তা প্রয়োগ শুরু করেছে। এই টিকার দুই কোটি ডোজ কিনতে সেরাম বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেও ভারত অভ্যন্তরীণ চাহিদা আগে মেটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রপ্তানি আটকে গেছে। সেরাম থেকে দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে ৩২ লাখ ডোজ টিকা।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে এক কোটি ২ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড টিকা। আর তা থেকে ৭২ লাখ ডোজ ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ পেয়েছেন, নতুন চালান না এলে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া অনিশ্চয়তায় পড়বে বলে নতুন উৎস থেকে টিকা পেতে সরকারের তৎপরতা শুরু হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
চাহিদা মেটাতে চীন ও রাশিয়া থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কেনা হবে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, চীন থেকে আমরা আনব। তারা ৬ লাখ গিফট হিসাবে দেবে প্রথমে। বাকিটা পয়সা দিয়ে কিনে আনব। রাশিয়ার তৈরি স্পুৎনিক-ভি টিকা যৌথ উৎপাদনে যাওয়ার আগে সেই টিকা কিনে আনার কথাও জানান মোমেন। প্রডিউস তো চাইলে কালকেই হয়ে যাবে না। সময় লাগবে। এর মধ্যে আমরা পয়সা দিয়ে কিছু কিনে আনব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এর আগে রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা আনার চেষ্টা করা হলেও সেগুলোর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিডএইচও) অনুমোদন না থাকায় পিছিয়ে এসেছিল সরকার। এখন সে অবস্থান পাল্টেছে।
মোমেন বলেন, চীন বলছে, আমাদের ভ্যাকসিন ডব্লিউএইচও কখন অনুমোদন দিবে আমরা জানি না। তবে এটা ১০০ মিলিয়নের বেশি লোক এটা ব্যবহার করেছে, ৮০টা দেশে আমরা রপ্তানি করেছি। ৬৩ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এটা গ্রহণ করেছে। কারও কোনো অসুবিধা হয় নাই, এটাই একটা প্রমাণ। আবার যেসব দেশ টিকা নিয়ে গেছে, ডব্লিউএইচও তাতে কিছু মনে করেনি। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও একই রকমের বক্তব্য আসার কথাও সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে বাংলাদেশে স্পুৎনিক-ভি টিকার যৌথ উৎপাদনের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশের টিকার প্রয়োজন মেটানোর মতো উৎপাদন সক্ষমতা তাদের নেই। এজন্য যৌথ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত। ইতোমধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে গোপনীয়তার চুক্তি সই হয়ে গেছে। বাকি কাজে এগিয়ে নিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, তাদেরকে (বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের) সক্ষমতা আছে, এমন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির তালিকা দেওয়া হয়েছে। তারা এক বা একাধিক কোম্পানিকে কাজটা করার জন্য দিতে পারে।
যৌথ উৎপাদন হলে বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে রপ্তানির সুযোগও থাকছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটা শর্ত আমরা যুক্ত করেছি। (বলেছি), আমরা যদি তৈরি করি, তখন আমরা এটাকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি করতে পারব? রাশিয়া রাজি হয়েছে, তোমরা যদি রপ্তানি করতে চাও করো।
সেরাম ইনস্টিটিউটে পরিপূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে টিকা উৎপাদন করলেও বাংলাদেশে টিকা পাঠাতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, ভারতের সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে তিন কোটি ডোজ আনার। আমরা টাকাও দিয়ে দিয়েছি ওদের। ভারত আমাদের সবসময় বলেছে, তারা ভ্যাকসিনটা দেবে, কখনও বলেনি যে ভ্যাকসিন তারা দেবে না। প্রতি মুহূর্তে বলেছে। তবে তাদের ডিলে হচ্ছে। নিজেদের ঝামেলার জন্য। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যে কোম্পানি তৈরি করেছে, তারা কিন্তু ফুল ক্যাপাসিটিতে তৈরি করেই যাচ্ছে। কিন্তু পাঠাতে, অর্থাৎ ভারত থেকে আসতে দেরি হচ্ছে। এবং ভারত আমাদের সবসময় অঙ্গীকার করছে যে, তোমরা তোমাদের ভ্যাকসিন পাবা। সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা পুরো টাকাও দিয়ে দিয়েছি। তারপর ইন্ডিয়া আমাদের দিল কিছু। পুরোটা দিতে পারে নাই। ডিলে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বনেতাদের ৪ পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে টিকা নিলেন আরো ১৬ হাজার জন