রামুর প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিকাণ্ড

পরিকল্পিত নাশকতার অভিযোগ

রামু প্রতিনিধি | রবিবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকূল ইউনিয়নের চেরাংঘাটায় রাখাইন জনগোষ্ঠীর প্রায় দেড়শ’ বছরের প্রাচীন উসাইচেন বড় ক্যাং বৌদ্ধ বিহারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক এগিয়ে আসায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। এতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বিহারটির দোতলায় ওঠার সিঁড়ি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।

শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সংশ্লিষ্টদের ধারণা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এটি একটি পরিকল্পিত নাশকতার চেষ্টা। তবে কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে কেউ নিশ্চিত হতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে চেরাংঘাটাস্থ উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারের (বড় ক্যাং) অধ্যক্ষসহ সবাই প্রতিদিনের মত ঘুমিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে রাত ২টার দিকে আকস্মিক আগুন দেখে তাদের ঘুম ভাঙ্গে। এসময় বৌদ্ধ বিহারের অবস্থানকারী ভিক্ষুদের শোরচিৎকারে

এলাকাবাসী দ্রুত এগিয়ে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টায় নামে। কেউ একজন ৯৯৯ এ ফোন করলে দ্রুত রামু ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এলাকাবাসী এবং ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টায় আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে বিহারের দোতলায় ওঠার সিঁড়িটি পুড়ে যায়।

বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি মংকিউ রাখাইন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে রাত দুইটা ৫ মিনিটের দিকে বিহারের পাশের মাঠ দিয়ে এক অজ্ঞাত লোককে বিহারের দিকে আসতে দেখা যায় এবং মিনিট পাঁচেক পরেই ওই লোকটি দ্রুত দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ওই লোকটিই বিহারে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই দুর্বৃত্তের নাম পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিহার পরিচালনা কমিটির নেতা অংছে রাখাইন বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে মনে হচ্ছে ঘটনাটি পরিকল্পিত। এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ এ নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে।

কক্সবাজার সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সাংসদ অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন বলেন, বিহারটি ধ্বংস করতে কেউ টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি বিহারের নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দাবি করছি।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল হক বলেন, এটি নাশকতা না নির্বাচনকালীন নাশকতা এখনও মন্তব্য করার সময় আসেনি। ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তদন্তের পর বলা যাবে এটি নাশকতা কিনা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে পবিত্র কোরান অবমাননার অভিযোগ তুলে রামুর ১২টি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও ৩০টি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় হামলা করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে। পরদিন উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি বিহার ও ১১টি বসতঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনার প্রায় এক যুগ পর আবার পুনরাবৃত্তি হলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবির পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হামিদা বানুর ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধভোটকেন্দ্রে স্কুলের নথি পুড়তে আগুন দিয়েছে পিয়ন!