রামুর অভিযুক্ত গৃহবধূ রাশেদা তিনদিনের রিমান্ডে

শাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা

রামু প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:৫৮ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির উমখালীতে মমতাজ বেগম(৬৫) নামের এক বৃদ্ধাকে ছয় টুকরো করে হত্যার পর মাটি চাপা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার পুত্রবধূ রাশেদা বেগম(২৫)কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

আজ শনিবার(২৩ জুলাই) সকালে জেলা কারাগার থেকে রাশেদাকে রামু থানায় নেওয়া হয়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার(২১ জুলাই) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে রামু থানা পুলিশ। আদালতের বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন আজাদীকে বলেন, “এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাশেদা বেগম। তাকে কারাগার থেকে আনার পরই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে।”

ওসি বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জের ধরে রাশেদা বেগম ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার শাশুড়ি মমতাজকে হত্যা করেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি। তবে এ হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না সেটারও অনুসন্ধান চলছে।”

মামলার অন্যান্য আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে ও জানান ওসি।

পুলিশ জানায়, গত ১৬ জুলাই বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের পশ্চিম উমখালীতে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মমতাজ বেগমকে। এরপর তার মরদেহ ছয় টুকরা করে বস্তায় ভরে বাড়ির আঙিনায় মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় মাটি খুঁড়ে নিহত মমতাজের মরদেহের টুকরাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে মমতাজের একমাত্র ছেলে মো. আলমগীরের স্ত্রী রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ জুলাই বিকেলে আদালতের মাধ্যমে রাশেদাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এর পরদিন ১৯ জুলাই নিহত মমতাজের মেয়ে আয়েশা বেগম বাদী হয়ে রাশেদা বেগম, তার দুই ভাই অলী উল্লাহ, তারেক উল্লাহ এবং বাবা সৈয়দ নুর সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

আলোচিত এ মামলাটি তদন্ত করছেন রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, “চাঞ্চল্যকর মমতাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।”

উল্লেখ্য, বউ-শাশুড়ির মধ্যে মনোমালিন্যের জের ধরে গত শনিবার বিকালে ছেলের বউ রাশেদা বেগম শাশুড়ি মমতাজ বেগমকে ধারালো দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

এরপর মরদেহ কেটে ছয় টুকরা করে বাড়ির আঙিনায় টিউবওয়েলের পাশে গর্ত করে পুঁতে ফেলে। এ সময় ছেলে মো. আলমগীর ঘরে ছিলেন না। তিনি কক্সবাজার সৈকতের একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী।

শনিবার বিকেলে আলমগীর ঘরে এসে মাকে বাড়িতে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। না পেয়ে ফেসবুকে মায়ের ছবি দিয়ে সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতেও তিনি মায়ের খোঁজ পাননি। পরদিন বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বাড়ির আঙিনার টিউবওয়েলের পাশে মায়ের শাড়ির অংশ দেখতে পেয়ে মাটি খুঁড়তেই মায়ের শাড়ি ও মৃতদেহ দেখেন। এরপর পুলিশে খবর দেওয়া হলে পুলিশ ছয় টুকরো মরদেহটি উদ্ধার করে।

এদিকে, গতকাল শুক্রবার(২২ জুলাই) বিকালে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের উমখালী হাজির পাড়া এলাকায় নিহত মমতাজ বেগমের বাড়ির পাশে রাজারকুল-চেইন্দা সড়কে মমতাজ বেগমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও পুত্রবধূ রাশেদার ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

এ সময় বক্তারা একজন বয়োবৃদ্ধা শাশুড়িকে স্বয়ং পুত্রবধূ কেটে ৬ টুকরো করে মাটিচাপা দেয়ার ঘটনা সকল বিবেকবান মানুষকে হতবাক করেছে জানিয়ে এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি করেন। এ ঘটনায় দোষী সকল খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

নিহতের পরিবারের সদস্য সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে রামু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোদেশতা বেগম রীনা, রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জহুর আলম, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রানা, ইউপি সদস্য আমির হামজা ও আজিজুল হক দুদু মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ ও হাজীরপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ বক্তব্য দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় বিলে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে নিহত ১
পরবর্তী নিবন্ধগাছ উপড়ে পড়ে টাইগারপাশ সড়কে যানজট