বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বচসাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গতকাল রাতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদকর্মীরা বলেছেন, একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটের পাশে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া বেশ কয়েকটি দোকানপাটে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয়েছে বিনোদপুর গেইট সংলগ্ন পুলিশ বক্সেও। খবর বিডিনিউজের।
সংঘর্ষের পর দেড়শ জনের অধিক আহত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছে বলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম জানান। রাত ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখন পর্যন্ত দেড়শ জনের অধিক আহত চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান–উল–ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ও অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনার সূত্রপাত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজার সংলগ্ন ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়কে। ধীরে ধীরে তা ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বলে জানান রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি আব্দুস সালাম। রাত সাড়ে ১০টায় রাজশাহীর বিজিবি–১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাব্বির আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থলে সাত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আইন–শৃক্সখলা বাহিনীও কাজ করছে।
এ ঘটনার পর দুদিনের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে রোব ও সোমবারের সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭–১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসা এবং ভাড়াকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটে এলে আবারও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বচসা হয়। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে দেয়। এ সময় একে–অপরকে লক্ষ্য করে ইট–পাটকেল ছুড়তে থাকে।
এ ঘটনায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন। রাত পৌনে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস এসে দোকানপাট ও পুলিশ বক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।