ক্রিস গেইলের তান্ডবের পর বরিশালের স্কোরটা ১৪০ এর ঘর পেরিয়েছে মাত্র। আর সে লক্ষ্য নিয়েও ম্যাচের ভাগ্যটা দুলছিল এদিক আর ওদিক। একবার বরিশালের দিকেতো আরেকবার খুলনার দিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান রানার পেস আগুনে পুড়ে শেষ পর্যন্ত জয়টা বরিশালেরই। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গতকাল দিনের প্রথম ম্যাচে খুলনা টাইগার্সকে ১৭ রানে হারিয়েছে বরিশাল। গতকালই প্রথম এবারের বিপিএলে খেলতে নেমে ভেল্কি দেখিয়েছেন আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান। তবে দিন শেষে নায়ক তরুণ পেসার মেহেদী হাসান রানা। কারন তার এক ওভারেই যে খুলনার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। মুশফিক সহ এক ওভারে তিনজনকে ফিরিয়ে জয়ের নায়ক তাই রানাই। গেইল, সাকিব, মুশফিক, সৌম্য, পেরেরা। কত বড় বড় নামের পাশে মেহেদী হাসান রানা যেন বেমানানই। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে এই তরুণই বাজিমাত করলেন। দলকে এনে দিলেন দারুণ স্বস্তির এক জয়। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা বরিশাল শুরুটা ভাল করতে পারেনি। ক্রিস গেইলের সাথে ইনিংস শুরু করতে নামা জ্যাক লিনটট ২৬ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি। ১১ রান করে ফিরেন লিনটট। সাকিবের জায়গায় তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা জিয়াউর রহমানও পারেননি গেইলকে সঙ্গ দিতে। ১০ রান করে ফিরেছেন জিয়াউর। এরপর বলতে গেলে গেইল একাই টেনে নিয়ে গেছেন দলকে। দলকে ৭৯ রানে পৌঁছে দিয়ে ফিরেন গেইলও। সেকেগু প্রাসান্নার বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত হন গেইল। তবে ফেরার আগে স্বভাব সুলভ ৩৪ বলে ৪৫ রান করে আসেন। যেখানে ৫টি চার এবং ২টি ছক্কার মার রয়েছে। শান্ত এবং তৌহিদ হৃদয় কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন জুটি গড়তে। কিন্তু তারাও পারেননি বড় কোন জুটি গড়তে। শান্ত ফিরেছেন ১৯ আর হৃদয় ফিরেছেন ২৩ রান। সাত নম্বরে নামা সাকিবের ব্যাটও হাসেনি। ৬ বলে ৯ রান করে ফিরেছেন পেরেরার বলে। ফলে গেইলের ঝড়ের পর বরিশাল থামে ১৪১ রানে। খুলনা টাইগার্সের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কামরুল ইসলাম রাব্বি, থিসারা পেরেরা এবং ফরহাদ রেজা। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান, প্রাসান্না এবং শরীফুল্লাহ। ১৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা খুলনা টাইগার্স প্রথম ওভারেই যেন পিছিয়ে পড়ে। এবারের বিপিএল প্রথম মাঠে নামা আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা দেন খুলনা শিবিরে। ইনিংসের তৃতীয় বলেই আগের ম্যাচের সফল ব্যাটার আন্দ্রে ফ্লেচারকে ফেরান মুজিব। পরের বলে সৌম্য সরকার ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। প্রথম চার বলে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া খুলনার ব্যাটিং আর খোলস ছেড়ে বের হতে পারেনি। মেহেদী হাসান এবং রনি তালুকদার এগিয়েছেন বটে তা ছিল একেবারে শম্বুক গতির। দুজনের জুটিটা ৩১ রানের। তবে তার জন্য খরচ করেছে ৩৬ বল। মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে ফিরেন দুজন। ১৭ রান করা মেহেদীকে সাকিব আর ১৪ রান করা রনিকে ফেরান লিনটট। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মুশফিক এবং ইয়াসির আলি রাব্বি ক্রিজে এলে বাড়তে থাকে রানের গতি। ৪৬ রানের দারুন এক জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন দুজন। তখনই ধাক্কাটা দেন মেহেদী হাসান রানা। তার বলে ফিরেন ২০ বলে ২৩ রান করা রাব্বি। থিসারা পেরেরা উইকেটে এসে ঝড় তোলার আভাস দেন। মুজিব উর রহমানের শেষ ওভার থেকে নেন ১২ রান। প্রথম তিন ওভারে ১০ রান দেওয়া শেষ ওভারে দিয়েছেন ১২ রান। কিন্তু এই লংকানের ঝড় থামতেও বেশি সময় লাগেনি। ৯ বলে ১৯ রান করে ফিরেন পেরেরা। যেখানে একটি চার এবং দুইটি ছক্কার মার ছিল। শেষ দুই ওভারে যখন খুলনার দরকার ২১ রান। হাতে তখনো মুশফিক সহ তিন উইকেট। পেসার মেহেদী হাসান রানা যেন ম্যাজিক্যাল এক ওভার করলেন। ওভারের দ্বিতীয় বলে ফেরালেন ফরহাদ রেজাকে। পঞ্চম বলে শরীফুল্লাহর ক্যাচটা দারুণভাবে নিলেন লিনটট। আর শেষ বলে স্কুপ করতে গিয়ে ফিরলেন মুশফিক। আর তাতেই থেমে যায় খুলনার ইনিংস ১২৪ রানে। রানা ১৯ ওভারে খুলনার তিন উইকেট তুলে নিয়ে বরিশালকে পাইয়ে দিলেন দারুণ এক জয়। মুশফিক শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরেছেন ৩৬ বলে ৪০ রান করে। শেষ ওভারে তিন উইকেট সহ ১৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা মেহেদী হাসান রানা।












