পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে রাতারাতি গড়ে উঠছে দোকান। মাত্র দিনকয়েকের মধ্যে পতেঙ্গা বিচ থেকে নারিকেল তলা পর্যন্ত সাগরপাড়ে নির্মিত হয়েছে শতাধিক দোকান। এ সব অপরিকল্পিত দোকান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে। একই সাথে নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের পাশাপাশি অবৈধ মাদক ব্যবসারও আস্তানা গড়ে উঠেছে। পুলিশ এবং স্থানীয় একটি চাঁদাবাজ চক্র দোকান নির্মাণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ সব দোকান থেকে প্রতিদিনই মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলেও জানা গেছে। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রাস্তা নির্মাণে পতেঙ্গা এলাকায় রাস্তা কাম বাঁধ নির্মিত হয়। এই প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা এলাকায় অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয় অনন্য সৌন্দর্যের পতেঙ্গা বিচ। প্রকল্পটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। অথচ বিচ এলাকায় যততত্র অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করতে গিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ ও ঘাস কেটে ফেলা হচ্ছে। বিচ এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ঢিবি তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি গ্রিন লনে লাগানো হয়েছিল গাছ এবং ঘাস। অবৈধ দোকান নির্মাণের জন্য সবগুলো গ্রিন লন দখল করে ঘাস এবং গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
বিচের উন্মুক্ত এলাকা ক্রমে সংকুচিত করে ফেলা হচ্ছে বলে উল্লেখ করে স্থানীয় সূত্রগুলো বলেছে, শহরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাটি সংঘবদ্ধ একটি চক্র নষ্ট করে ফেলছে।
দোকান নির্মাতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা এ সব দোকান নির্মাণ করাচ্ছেন। পুলিশি সহায়তায় রাতেদিনে গড়ে তোলা হচ্ছে দোকান। দোকানগুলো নির্মাণের জন্য প্রকারভেদে এককালীন টাকা নেয়ার পাশাপাশি দৈনিক ভাড়াও পরিশোধ করতে হচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাসিক ভাড়া ভিত্তিতে দোকান ভাড়া দিয়েছে। গত রাত ২টার সময়ও দোকান নির্মাণ করতে দেখা গেছে।
পতেঙ্গা আউটার রিং রোডের পাশে বিচ এলাকাটি শহরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা বলে মন্তব্য করে এডভোকেট আমান আকবর চৌধুরী গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র এই সৌন্দর্য নষ্ট করে দিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে না আসলে অপার সৌন্দর্যের এই স্থানটি ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অপর একজন দর্শনার্থী বলেন, পতেঙ্গা সৈকতকে যেভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল সেভাবে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এখানের সব সৌন্দর্য অবৈধ দখলদারেরা ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে শেষ করে দিচ্ছে।
হারুন নামের একজন পুলিশ সদস্য স্থানীয়ভাবে সমন্বয় করে দোকানগুলো নির্মাণে সহায়তা করছেন বলেও একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন। তারা বলেন, নেতা এবং পুলিশের সমন্বয়ে দোকানঘর নির্মিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএর একজন কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখানে দোকান নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। সৌন্দর্যবর্ধনের আরো বহু কাজ বাকি। এই বিচ নিয়ে সিডিএর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেটিকে নস্যাৎ করে কোনো চক্র ষড়যন্ত্র করছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন করছে সিডিএ। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সিডিএর। সিডিএ থেকে এই বিচ এখনো কাউকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। যতটুকু জানি এটির কাজও শেষ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরা অবশ্যই বিষয়টি খোঁজখবর নেবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পতেঙ্গা থানা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের সাথে অবৈধ দোকানঘর নির্মাণের কোনো সম্পর্ক নেই। সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে পর্যটকদের বসার কিছু ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এগুলো স্থানীয় কিছু লোকজন করেছে। এর সাথে পুলিশের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হলে সিডিএ অভিযান চালিয়ে তা উচ্ছেদ করতে পারে। আমাদের থেকে সহায়তা চাওয়া হলে অবশ্যই আমরা তা করবো। সিডিএ থেকে আমাদের কিছু বলা হয়নি বলেও পতেঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী ওয়াহিদ হাসান গতকাল বলেছেন, পতেঙ্গার সৌন্দর্য রক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। যেভাবে দোকানপাট তৈরি করা হচ্ছে তা চলতে দেয়া উচিত নয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পুনর্বাসন করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পতেঙ্গা চট্টগ্রামের পর্যটনের একটি অনেক বড় সম্পদ। এই সম্পদকে নষ্ট করে ফেলা ঠিক হবে না।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, পতেঙ্গা এলাকায় সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদের অপতৎপরতা ঠেকাতে ইতোমধ্যে সিডিএ ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পতেঙ্গাসহ পুরো এলাকার সব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।