রাজবিলার পাহাড়ে এক মাস ধরে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে হাতির পাল

| শুক্রবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবান সদর উপজেলায় পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে এক মাসের বেশি সময় ধরে জমি, বাগান ও ফসলের ক্ষতি করছে একটি হাতির পাল; তাতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন পাহাড়ের বাসিন্দারা। বনবিভাগ ও পাহাড়িরা জানান, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের কয়েকটি পাড়ায় ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে ছোটবড় ১১ হাতির ওই পাল। প্রতি রাতেই পটকা ফুটিয়ে ও মশাল জ্বালিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। খবর বিডিনিউজের। একেক রাতে একেক পাড়ায় গিয়ে কৃষকের ক্ষেত নষ্ট করছে হাতিগুলো। ফলে সংকটে পড়েছেন তিন পাড়ার প্রায় ২০০ পরিবার। এর মধ্যে রাজবিলা ইউনিয়নেরর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাংকাপাড়ার ৭১ পরিবার, তাইংখালীর ৫০ পরিবার এবং রাবার বাগান ৯ নম্বর ব্লকে ৬৭ পরিবারের বসবাস। রাজবিলা ইউনিয়ন বান্দরবান জেলা হলেও ভৌগোলিক কারণে এলাকাটি রাঙামাটির জেলার কাপ্তাই বনবিভাগের অধীনে পড়েছে। ঝাংকাপাড়ার কারবারি (গ্রামপ্রধান) অংশৈ প্রু মারমা বলেন, তার নিজের ৮০০টি কলাগাছ, চার মণ কচু, মরিচ, দুই মণ আদা এবং চার একর জায়গায় ফুলঝাড়ুর ঝাড় ছিল। দুই রাতেই সব নষ্ট করেছে হাতির পাল। অথচ ফুল ঝাড়ু বিক্রি করেই চারপাঁচ লাখ টাকা পাই। এত বড় ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। হাতি তাড়ানোর আর কোনো উপায়ও নাই। এই পাড়ায় আমরা ৭১টি মারমা পরিবার। কম বেশি সবারই এক অবস্থা।’

বনবিভাগের রাজবিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা কামাল হোসেন বুধবার বলেন, ‘হাতির ওই পাল দীর্ঘদিন ধরেই সেখানে রয়েছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। এখন রাজবিলা ইউনিয়নের রাবার বাগানের ৯ নম্বর ব্লক এলাকায় পালটি অবস্থান করছে।’ নিজেদের ক্ষতি হলেও হাতির ক্ষতি না করে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের তিনি সহাবস্থানের পরামর্শ দিচ্ছেন। রাজবিলা এলাকার পাহাড়গুলো খুব উঁচু নয়। ছোট ছোট টিলার মত। ঝাংকা ও নাইক্য খাল দুটি বেশ প্রবহমান। দুটি খালেই বেশ পানি ও পাথর রয়েছে। খালের দু’পাশে রয়েছে ব্যক্তিগত কলাবাগান, পাহাড়ি ফুলঝাড়ুর ঝাড় এবং আদাহলুদের ক্ষেত। পাশের কয়েকটি কলাবাগান ঘুরে দেখলে মনে হয়, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে গেছে। গোড়া থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে পাহাড়ি কচু ও ফুলঝাড়ুর ঝাড়। আশপাশের কলা, পেঁপে, কুল ও সবজি বাগানের কম বেশি একই চিত্র। ঝাংকাপাড়া থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপর একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাগানে নিয়ে যান কৃষক অংসাচিং মারমা। নিজের ক্ষতিগ্রস্ত কলাবাগান দেখিয়ে তিনি বলছিলেন, এখানে ৬০০টির মত কলাগাছ ছিল। এছাড়া তিন মণ আদা ও ছয় মণ কচু লাগানো ছিল। হাতির পাল সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আক্ষেপ করে এই চাষি বলেন, ‘হাতিদের খাদ্যের অভাব থাকলে খেয়েই চলে যাক। কিন্তু এমন না; অর্ধেক খেয়ে অর্ধেক নষ্ট করে ফেলে তারা। এতগুলো ফসলের ক্ষতি হয়ে পথে বসার মত অবস্থা। পাড়াবাসী সবাই মিলে এত করে তাড়ানোর চেষ্টা করছে। হাতিগুলো যাচ্ছে না কোথাও।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজবিলা রেঞ্জ কর্মকতা কামাল হোসেন জানান, কেউ যদি হাতির আক্রমণে মারা যায় তাহলে সরকারি বিধি মোতাবেক তিনি ৩ লাখ টাকা পাবেন। আবার কেউ গুরুতর আহত হলে পাবেন ১ লাখ টাকা। তাছাড়া কারও যদি ক্ষেতের ফসল বা বাড়িঘর নষ্ট হলে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পায়। এটা সরকারে বিধিবিধান আছে এবং একটা কমিটিও আছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুম্‌’আর খুতবা
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের পদত্যাগসহ ৭ দাবি বাম জোটের