রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা থাকতে হবে

| সোমবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

আবার সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। শনিবার পুলিশবিএনপি দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ঢাকা। পুলিশ হাসপাতালে হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন দুজন। একজন পুলিশের কনস্টেবল, আরেকজন যুবদল নেতা। পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরুর পর কাছেই কাকরাইল মোড়ে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দেওয়া হয়, ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয় আরো ডজনখানেক যানবাহনে। পুলিশ জানিয়েছে, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে দুর্বৃত্তরা আইসিইউ সুবিধাসংবলিত একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ চারটি গাড়ি ও ১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। এছাড়া ৯টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ি ভাঙচুর করে। বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে দৈনিক বাংলার মোড় এলাকায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন। গত শনিবার বিকেল ৪টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নয়া পল্টনে সংঘর্ষ চলাকালে মুগদা এলাকার এক যুবদল নেতার মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষের মধ্যে ৪৩ বছর বয়সী শামীম মোল্লা আহত অবস্থায় পুলিশ হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে তার সংগঠনের তরফে দাবি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন পর প্রত্যক্ষ করলো রাজনীতির এমন উগ্ররূপ। ঢাকাসহ সারা দেশে এখন উৎকণ্ঠা। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা। দাবি করা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কিন্তু নির্বাচন নিয়েই অশান্তির আশঙ্কা দেশজুড়ে। সংঘাতসংঘর্ষ এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল নির্বাচন পদ্ধতি। বলা হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন থেকে এক প্রকার ইঙ্গিত মিলেছে যে, নভেম্বরের মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তাই তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের এই সময়টাকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ সময় বলে মনে করছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ কারণেই যেকোনো মূল্যে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন করতে চায় দুই পক্ষই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এতো বছর পরও নির্বাচনের ব্যাপারে গণতান্ত্রিক ধারার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতা গড়ে ওঠেনি।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণকে বলা হয়, তারা রাজনীতিতে আগ্রহী এবং নির্বাচনপ্রিয় মানুষ। নির্বাচনকে রাজনৈতিকসচেতন ক্রিয়ার চাইতে উৎসবের আমেজে গ্রহণ করা হতো এ দেশে। কিন্তু নির্বাচন এখন এক মারমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার নাম। নির্বাচন তা সে জাতীয় হোক আর স্থানীয় হোক, নির্বাচনের সময় এলেই এক অজানা আতঙ্ক ভর করে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেহেতু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত, তাই এই নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা এবং আতঙ্ক থাকে চরমে। স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরেও জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত করার কোনো গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি নির্ধারণ করতে না পারার কারণে প্রতিটি নির্বাচনের আগে উত্তেজনা আর নির্বাচনের পরে প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটেই চলেছে। ফলে মেয়াদি জ্বরের মতো বছরব্যাপী উত্তাপ আর নির্বাচনের আগে তীব্র কাঁপুনি তৈরি হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে একটা মানুষ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে এক বিষয়ে মতের মিল না হতেই পারে তাই বলে অন্যের মতকে একেবারে উড়িয়ে দিয়ে নিজের মতামতটাই সঠিক সেটা প্রতিষ্ঠা করার এমন প্রবণতা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে অনেক সময় মতের অমিল হলেই সেটা সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়ায়। সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘বড় কোনো সমাবেশ থেকে শুরু করে একেবারে ছোট আয়োজনেও সংঘাতের আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এখন। যেমন ছোট একটা বিষয়, ধরা যাক সেটা হলো খেলা। যেকোন খেলা হলে দুই দলের সমর্থক গোষ্ঠী থাকবে। সেই খেলা উপভোগ করা এবং গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু দেখা যাবে মানুষ এত অসহিঞ্চু আচরণ করে যে হতাহতের ঘটনা ঘটে যায়। পুলিশ মোতায়েন করা লাগে, ১৪৪ ধারা জারি করতে হয়। এটা তো কাম্য হতে পারে না’।

আমরা আশা করবো, সকল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে। আশা করবো, রাজনৈতিক দলগুলো পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিজ দলের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে এবং সহনশীল থাকবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য পথ বের করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে