রাজকুমার আর আম

জুয়েল আশরাফ | বুধবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

(৩২.৮০৮)

অনেক অনেক আগের কথা।

রাজকুমার তখন খুব ছোট। সে আম খেতে ভালোবাসতো। যখনই রাজা আম আনতো সে খুব খুশি হতো। একদিন রাজার মনে হলো রাজকুমার আম খুব পছন্দ করে। এজন্য রাজা বাগানে একটি আম গাছ লাগালেন। কারণ রাজকুমার একদিন বড় হবে। তাই আমের অভাব হবে না তার। রাজা জানতেন, এই আম গাছ ঠিকই একদিন অনেক বড় হয়ে যাবে কিন্তু রাজা বুড়ো হয়ে যাবে।

রাজকুমার বড় হয়ে উঠল। কিন্তু রাজা এক যুদ্ধে নিহত হলেন। তিনি তার সময়ের অনেক আগেই চলে গেলেন। কিন্তু তার রোপণ করা আম গাছটি তখনও ছিল। যখনই রাজকুমার তার বাবার অনুপস্থিতি অনুভব করে সেই গাছের কাছেই বসতো। কারণ একমাত্র সেই গাছই তার স্মরণ পূরণ করতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ওই গাছের কাছে বসে থাকে। সম্ভবত রাজকুমার সেই জয়গায় বসতে খুব পছন্দ করেছে। একদিন রানী মা আসেন। রানী মা বললেন, তুমি শুধু এখানেই বসে থাকো! তোমার হয়তো এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। তবে কাজের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।

রাজকুমারকে আরও বুঝিয়ে রানী মা বললেন, আমি জানি তোমার বাবা আর কখনও ফিরে আসতে পারবেন না। তাকে মনে রাখা ভালো। কিন্তু তাকে মনে রাখার জন্য চিন্তা করা ঠিক নয়। তিনি তোমার জন্য এই গাছ লাগিয়েছেন। কারণ তুমি আম খুব পছন্দ করো।

রাজকুমার বলল, আমি আম খুব পছন্দ করি। কিন্তু আমি এটাও চেয়েছিলাম, বাবা এখন আমার সাথে থাকলে খুব ভালো হতো। কিন্তু তিনি নেই।

রানী দেখলেন রাজকুমারের স্বাস্থ্য খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। রানী কিছুই বুঝতে পারলেন না যে রাজকুমারকে কী দেওয়া উচিত যাতে তার স্বাস্থ্য খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। শহরের সবাই এই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। রাজকুমারের স্বাস্থ্যের খুব দ্রুত অবনতি ঘটতে লাগল।

একদিন একজন হাকিমকে ডাকা হলো। রানী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হঠাৎ করে রাজকুমারের স্বাস্থ্য কেন খারাপ হয়ে গেল?

হাকিম বললেন, আপনাকে সবচেয়ে মিষ্টি আম খুঁজে আনতে হবে। আর আমটি সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখতে হবে।

রানী বললেন, আপনি আম চিনতে আরও কিছু বলুন, আমরা সেই আম গাছটিকে চিনতে পারব কিভাবে?

হাকিম বললেন, এরকম একটি আম আনতে হবে যা মধুর চেয়েও খুবই মিষ্টি হয়, সেই আমের রস বের করে যদি রাজকুমরাকে দেওয়া হয়, তবে সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।

কিন্তু রানী বুঝতে পারলেন না এমন গাছ রাজকুমারকে নিরাময় করতে পারে। রানী চিন্তিত হয়ে বললেন, তবে অন্য আম কেন? আমার রাজ্যের আম দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে না কেন? আমার রাজ্যের গাছ কি এটা করতে পারে না?

হাকিম বললেন, রাজকুমারের রোগ আলাদা, যেটা অন্য রাজ্য থেকে আম এনে রোগ সারানো যায়, কারণ সেই রাজ্যের রাজা বাগানের সমস্ত আম প্রজাদের মধ্যে বন্টন করে দেয়। সেই দয়ালু রাজার দানের কারণে আম মধুর চেয়ে মিষ্টি হয় আর আমে কখনও পোকা ধরে না। তাই আপনাকে সেই গাছ থেকে আম আনতে হবে, তাহলেই আপনি রাজকুমারকে সুস্থ করতে পারবেন।

রানী হাকিমের কথা বুঝতে পারলেন আর সেনাপতিকে সেই গাছের সন্ধান করতে ভিন্ন রাজ্যে পাঠালন। কিছুদিন পর সেনাপতি সেই গাছের আম নিয়ে আসে। এই আম দিয়েই রাজকুমারকে সুস্থ করা যাবে। শুধুমাত্র এই আমই নিরাময় করতে পারে। রানী সেনাপতিকে বললেন, আপনি সেই আম গাছের ফল এনেছেন?

সেনাপতি বললেন, আমি সেই আম এনেছি।

এবার এই ফলের রস বের করে রাজকুমারকে দেওয়া হবে। তার স্বাস্থ্য ভালো হতে পারে আর সাথে সাথে রাজকুমারকে ফলের রস খাওয়ানো হয়। রাজকুমার ধীরে ধীরে সুস্থ হতে লাগল। রানী এই আমের রহস্য বুঝতে পারলেন না। হাকিমকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বিষয়ে আপনি কিছু বলুন।

হাকিম বললেন, আপনিও জীবনে এমন কাজ করুন যাতে প্রজাদের কোনো সমস্যা না হয়, আমরা যদি সবসময় ভালো কাজ করি আর মানুষের উপকার করি, তাহলে মানুষের কোনো সমস্যা হবে না আর আপনিও কোনো সমস্যায় পড়বেন না।

এরপর থেকে রানী বাগানের সমস্ত ফল প্রতিবছর প্রজাদের মধ্যে বন্টন করে দিল। রানীর এই দানের কারণে রাজকুমারের আর কোনো কঠিন রোগ হলো না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআর্তনাদ
পরবর্তী নিবন্ধকি ছু জা না কি ছু অ জা না