রাঙ্গুনিয়ায় সরিষায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক

অনেক স্থানে সরিষার সাথে হচ্ছে মধু চাষ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

রাঙ্গুনিয়ায় সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে মাঠের পর মাঠ। মাঠজুড়ে এখন হলুদের ঢেউ। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সরিষাক্ষেতের চোখ জুড়ানো দৃশ্য মুগ্ধ করছে সকলকে। সরিষায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক। এছাড়া উপজেলার কয়েক স্থানে সরিষাক্ষেতের পাশাপাশি করা হচ্ছে মৌ চাষ।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ায় তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প, প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ, সার সহায়তা করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ থেকে ২০০ জন, প্রণোদনা থেকে ২০০ জন এবং বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং ফলোআপ থেকে ২০০ জনসহ মোট ৬০০ জন কৃষককে গড়ে দেড় কেজি করে সরিষা বীজ দেয়া হয়েছে। এর ফলে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এ বছর ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। গত বছর করা হয়েছিল ১০৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে দক্ষিণ রাজানগর ও বেতাগী ইউনিয়নে সরিষাক্ষেতে স্থাপন করা হয়েছে মৌ বঙ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নে সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এই ইউনিয়নে ২০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। রাস্তার দুই পাশে চোখ জুড়ানো সরিষাফুল যে কাউকে মুগ্ধ করছে। চলার পথে অনেকেই এসব ক্ষেতে নেমে ছবি তুলছেন। বেতাগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল আলম বলেন, এই বিলগুলোতে আগে সরিষা আবাদ তেমন হতো না। এবার সরিষা আবাদের ফলে দুই ফসলি এই জমিগুলো তিন ফসলি জমিতে পরিণত হয়ছে। বেতাগীর ৯০ জন কৃষককে প্রণোদনা দিয়ে এই চাষে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং মাঠ দিবস করে সর্বোচ্চ ফলন অর্জনকারীকে ৫০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঘ মাসের শেষ দিকে ও ফাল্গুনের শুরুতে ক্ষেত থেকে সরিষা তোলা শুরু হবে। তবে এখন বিক্রি হচ্ছে সরিষা শাক। বাজারে এই শাকের চাহিদা থাকায় শাক বিক্রি করেও ভালো আয় করেছেন কৃষকেরা। তাছাড়া সরিষা চাষে খরচ কম এবং অল্প পরিশ্রমে ভালো ফলন আসায় চাষিরা দিন দিন সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। অনুকূল আবহাওয়া আর যথাযথ পরিচর্যার কারণে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা।

দক্ষিণ রাজানগরের ফুলবাগিচা খন্ডলিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম ৩ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন। পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া একটি মৌ বঙ স্থাপন করেছেন। আবাদ ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।

সরিষা চাষে খরচ ও লাভের বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এম এস সাহেদ বলেন, কানিপ্রতি ২০০ টাকার বীজ, চাষ করতে ১০০০ টাকা, সার লাগে ৮৫০ টাকার, শ্রমিক খরচ ৫০০ টাকা, ওষুধ ৫০০ টাকা এবং সরিষা কাটিং, মাড়াই, ঝাড়াই ও সংরক্ষণ বাবদ ৬ জন শ্রমিকের ৭০০ টাকা হারে মজুরি সাড়ে ৪ হাজার টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে এক কানি জমিতে সরিষা আবাদ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত সাড়ে ৭ হাজার টাকা খরচ হবে। আবার কানিপ্রতি উৎপাদন পাওয়া যাবে ১০৫১১০ কেজি সরিষা বীজ। প্রতি কেজি ১০০ টাকা হারে ১১ হাজার টাকা আয় হবে। এতে খরচ বাদে প্রতি কানিতে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সরিষার বাজারদর বেশি হওয়ায় লাভ বেশি হবে এবং বীজ হিসেবে বিক্রয় না করে তেল করে বিক্রয় করলে লাভ আরো বেশি হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের জন্য উপযোগী। তাই উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করায় রাঙ্গুনিয়ায় দিন দিন আবাদ বাড়ছে। এখানে বারী সরিষা১৪, ১৭, বীনা৯ সহ বিভিন্ন উন্নত জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। প্রতি তিন কেজি সরিষা থেকে এক কেজি তেল পাওয়া যায়। আমাদের কয়েকটি স্পটে সরিষা ভাঙানোর মেশিনও রয়েছে। সব মিলিয়ে সরিষা চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষাখাতে ক্ষমতার অপব্যবহারের জবাবদিহি চায় টিআইবি
পরবর্তী নিবন্ধদলে প্রতিযোগিতা থাকবে, তবে ব্যক্তির চরিত্রহনন বরদাশত করা হবে না