রাঙ্গুনিয়ায় সড়কের পাশে ধান মাড়াই, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ১৭ মে, ২০২৫ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

শস্যভাণ্ডার গুমাইবিলের বোরো ধান ঘরে তোলার কার্যক্রম চলছে এখন। কিন্তু ধান কেটে ব্যস্ততম চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কের পাশে মাড়াই করায় খড়কুটো উড়ে এসে পড়ছে পথচারী ও যাত্রীদের চোখেমুখে। এছাড়া সড়ক সংকুচিত হয়ে দুর্ঘটনার পাশাপাশি দুর্ভোগেও পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। কিন্তু এরপরও সড়কের পাশে ধান মাড়াই ও ধানখড় শুকানোর কাজ বছরের পর বছর এভাবেই চলে আসছে। বন্ধ করা যাচ্ছে না।

জানা যায়, বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ায় চলছে বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার মহাযজ্ঞ। প্রতি ধান কাটার মৌসুমে গুমাইবিল ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে ধান মাড়াই ও ধানখড় শুকানো হয়। প্রায় এক থেকে দেড় মাস ধরে চলে এই কার্যক্রম। ফলে ধান কাটার মৌসুমে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে এসব সড়কে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রামকাপ্তাই সড়কের মরিয়মনগর চৌমুহনী থেকে চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান পর্যন্ত চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত গুমাই বিলের অবস্থান। বিশাল গুমাই বিল থেকে ধান কেটে এনে সড়কের দুই পাশেই মাড়াইয়ের কাজ সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। সড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে কাটা ধানের স্তূপ। পাশেই ওইসব ধান ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে মাড়াই করা হচ্ছে। এতে বাতাসে উড়ছে খড়ের টুকরো আর ধুলোবালি, যা গিয়ে পড়ছে পথচারী আর ছোট যানের যাত্রীদের চোখেমুখে। এদিকে মাড়াই পরবর্তী ওইসব ধান আর খড় সড়কের ওপরেই শুকানো হচ্ছে। ফলে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। এতে যান চলাচল করছে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে। কাপ্তাই সড়ক ছাড়াও মরিয়মনগরগাবতল সড়ক, ঘাটচেকরানির হাট সড়কেও কৃষকেরা ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন। এ পরিস্থিতি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের প্রায় সড়কেই বিরাজ করছে।

চন্দ্রঘোনা গণবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। রাস্তায় খড় বিছানো থাকার কারণে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। চাকা পিছলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনায় পড়ার আশংকা থাকে। ভারী যানবাহন চলার সময় এক পাশ বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওভারটেকের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

কাটাখালীর কৃষক মোকাররম মিয়া জানান, তার বাড়ি জমি থেকে অনেক দূরে। ধান মাড়াইয়ের মেশিনের মালিকও রাস্তা ছেড়ে মেশিন নিয়ে ওদিকে যেতে চান না। তাই নিরুপায় হয়েই সড়কে ধান মাড়াইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। সিরাজুল ইসলাম নামে অন্য একজন কৃষক বলেন, বাড়ির উঠান ছোট। সেখানে মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করা যায় না। এ বছর ধান কাটা শ্রমিক না পাওয়ায় মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। আল্লাহর অনেক মেহেরবানি এ বছর বৃষ্টি আমাদের ঝামেলা করেনি।

ধান কারবারি রেজাউল করিম বলেন, বাড়িতে বড় উঠান নেই। ফলে জমির পাশের এই সড়কটি ব্যবহার করা হয়। সড়কটি পাকা এবং পিচঢালা হওয়ায় নতুন করে ধানের খোলা তৈরির ঝামেলা করতে হয় না। এসব কারণে কৃষকেরা একেবারে সবকিছু এখানে সেরে তারপর বাড়ির পথ ধরেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, সড়ক দখলে নিয়ে এসব কার্যক্রম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। নিষেধ করলেও কেউ মানে না। অল্প সময়ের জন্য হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কড়াকড়ি করা হয় না। তবে কৃষকদের বলা হয় যেন, সর্বসাধারণের অসুবিধা না করেই মাড়াই কাজ শেষ করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহালদায় ‘প্রাণ’ ফিরেছে, তবে ভুগছে মাটিখেকোদের থাবায়
পরবর্তী নিবন্ধসিস্টেম গ্রুপকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিশেষ সম্মাননা প্রদান