মাঠভর্তি সোনালী ধান। আকাশে মেঘবৃষ্টির লুকোচুরি। তাই পাকাধান গোলায় ভরতে ব্যস্ত কৃষকরা। কিন্তু ধান কাটার জন্য নেই পর্যাপ্ত শ্রমিক। এতে শ্রমিক সংকটে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কিন্তু ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এখনো মাঠে ৭০ শতাংশ ধান থেকে গেছে। এক কানি ধান কাটতে তিনজন শ্রমিক প্রয়োজন। আবার এই ধান কম দূরত্বে নেয়ার জন্য আরও দুজন এবং দূরত্ব বেশি হলে আরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন। এই হিসেবে এক হেক্টর জমির ধান কাটতে একদিনে কমপক্ষে ১৮ জন এবং বহন করে নেয়ার জন্যসহ ৩০ জন শ্রমিক প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার গুমাইবিলে এবার ৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে বোরধানের আবাদ হয়েছে। প্রতিদিন আবাদের ১০% করে ধান কাটা হচ্ছে। এই হিসেবে শুধুমাত্র গুমাইবিলেই প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিক প্রয়োজন। তাই স্থানীয় শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকদের বাইরের জেলা–উপজেলা থেকে আসা শ্রমিকের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় শ্রমিক সংকটের কারণে বিপাকে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার বৃহত্তর রোয়াজারহাট বাজারের সাপ্তাহিক হাট। সরেজমিনে দেখা যায়, সবমিলিয়ে ২০০–৩০০ মতো শ্রমিক ব্যাগ হাতে বসে আছেন।
বাঁশখালী থেকে আসা ধান কাটা শ্রমিক মো. করিম বলেন, আমরা প্রতিদিন ১২–১৪ জন মিলে ২–৩ বিঘা জমির ধান কাটতে পারি। ধানগাছ যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে ৬–৭ হাজার টাকা বিঘা আর যদি বাতাসে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে যায় তাহলে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা করে নিচ্ছি।
শ্রমিক কম আসার কারণ জানতে চাইলে নেত্রকোনা থেকে আসা আবদুল আজিজ জানান, চলতি বোরো মৌসুমে আমাদের এলাকাগুলোতেও ধান আবাদ হয়েছে। প্রায় শ্রমিক নিজ জমিতে কিংবা বর্গা নিয়ে নিজে চাষাবাদ করেছেন। নিজ এলাকার কাছেই শ্রমিক হিসেবে ৭–৮’শ টাকা মজুরী পাওয়া যায়। তাই এদিকে শ্রমিকরা কম এসেছেন।
আবদুল আলী নামে একজন কৃষক জানান, এখন ধান কাটা শ্রমিকের চড়া দাম। একজন শ্রমিককে তিন বেলা খাবার, এক প্যাকেট সিগারেট এবং দুই বেলা নাস্তা দেয়ার পর ১২–১৪’শ টাকা মজুরি দিতে হয়। কিন্তু চড়া দাম দিয়েও ঠিকমতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
আক্কাস মিয়া নামে অপর একজন কৃষক জানান, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে ধান কাটতে একদিনে ৩ জন শ্রমিক, নেয়ার জন্য আরও ২ জন, শুকানো এবং ঝাড়ানোর জন্য ২ জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। প্রতিজন শ্রমিককে ১৩০০ টাকা মজুরি দেয়ার পরও খাওয়ানো বাবদ আরও ২০০ টাকা করে খরচ আছে। এছাড়া মাড়াই করতে আরও ১০০০ টাকা প্রয়োজন। সবমিলিয়ে এক কানি ধান গোলাই তুলতে গেলে সাড়ে ১১ হাজার টাকা খরচ পড়ছে।
পোমরা এলাকার কৃষক আবদুর রহিম বলেন, গত বছর জনপ্রতি শ্রমিকের মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা। কিন্তু এ বছর তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। যার কারণে আমরা শ্রমিক নিতে পারছি না। অতিরিক্ত মূল্যে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে গেলে ধান বিক্রি করে দিন শেষে লোকসান গুনতে হবে।
এ ব্যাপারে গুমাইবিলে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, ধান কাটার মৌসুমে নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকেরা এখানে আসেন। শ্রমিক কম আসার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, একসময়ে বন্যায় তাদের ওইদিকে চাষ হতো না। আগাম জাত বের হওয়াতে ধান চাষ করে বর্ষার আগেই তারা ফলন ঘরে তুলছেন। তাই এদিকে শ্রমিক কম আসে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, হারভেস্টার এবং অন্যান্য ধান কাটার মেশিন দিয়ে ধান কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও আমরা কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বলছি। এতে খরচ কমবে কৃষকদের।